পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৮

ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার

বাংলাদেশের মানুষদের কাছে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের নাম, আপওয়ার্ক। ওয়েবঠিকানা: upwork.com।এখানে বায়াররা বিভিন্ন কাজ নিয়ে জব টিউন করে। কাজ করতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করে। এসব বিড দেখে বায়াররা তাদের কাজের জন্য যোগ্য লোককে বাছাই করে। আজ আপওয়ার্ক নিয়ে বিস্তারিত গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করেছি। আপওয়ার্কে একবার কাজ  পেলে পিছনে ফিরে না তাকালেও চলে। আপওয়ার্কে একজন বায়ারের কাছ থেকে ভালো ফিডব্যাক পেলে অন্য বায়াররা ঐ সেলারকে খুব সহজেই বিশ্বাস ও কাজের যোগ্য মনে করে।

ADs by Techtunes tAds
Upwork_Headache

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

৩য় পর্ব:  ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

৪র্থ পর্ব:  চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং

৫ম পর্ব: বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি

৬ষ্ঠ পর্ব: মার্কেটপ্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়

৭ম পর্ব: পেমেন্ট উত্তোলনের ‍উপায়

ADs by Techtunes tAds
আপওয়ার্কে যে সমস্ত কাজপাওয়া যায় :
-ওয়েব এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট

- এসইও, অনলাইন মার্কেটিং

- মোবাইল অ্যাপস

-রাইটিং ও ট্রান্সলেশন

-সেলস ও মার্কেটিং

-ডিজাইন ও মাল্টিমিডিয়া

-নেটওয়ার্কিং ও ইনফরমেশান সিস্টেম

-অ্যাডমিনিস্ত্রেটিভ সাপোর্ট  ইত্যাদি।



কাজের ধরন :
আপওয়ার্কে দুইভাবে কাজ করা যায়। একটি হচ্ছে ফিক্সড – অর্থাৎ কাজ শেষে বায়ার চুক্তি অনুযায়ী একটা নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করে।

ADs by Techtunes tAds
অপরটি হল আওয়ারলি – অর্থাৎ আপওয়ার্ক একটা বিশেষ সফটওয়্যার দ্বারা ফ্রিল্যান্সারদের কাজের হিসাব রাখে এবং বায়ারকে সময়মত কাজের স্ক্রীনশট দিয়ে কাজের অবহিত করা হয়। ঘণ্টা অনুযায়ী কাজ,যত ঘণ্টা কাজ করা হবে বায়ার তত ঘণ্টার ডলার পেমেন্ট করবে।

আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট ও শতভাগ প্রোফাইল তৈরি :
আপওয়ার্কে কাজের জন্য আবেদন করতে হলে প্রথমে আপওয়ার্কে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।  এক্ষেত্রে একটা ইমেইল এড্রেস লাগবে। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করার জন্য ইমেইল ভেরিফিকেশান করা হয়। অ্যাকাউন্ট করার সময় সাইনআপ ফর্মে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হয়। অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত হয়ে গেলে  নিজের প্রোফাইলকে প্রফেশনালভাবে সাজাতে হবে।

আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট লগইন থাকা অবস্থায় ” এডিট প্রোফাইল ” এগিয়ে অ্যাকাউন্ট এডিট করতে হবে। হাসি খুশি স্পষ্ট প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করা ভাল। প্রোফাইলে আপনার অতীতে করা কাজের উদাহরণযুক্ত করা যায়। এটা বায়ারকে আপনার প্রতি আস্থা তৈরি করে। তাছাড়া যে কাজে আপনি এক্সপার্ট সে কাজের যদি কোন সনদপত্র থাকে তাহলে তা ব্যবহার করতে পারবেন। টাইটেলে আপনি যে কাজ করতে চান সেগুলোর সুন্দরভাবে উল্লেখ করুন যাতে যে কেউ বুঝতে পারে আপনি সে কাজগুলোতে দক্ষ। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন এটাই আপনার নামের সাথে সবার প্রথমে ক্লায়েন্ট দেখতে পারবে। এটা দেখে ক্লায়েন্ট পছন্দ করলে আপনার বাকি প্রোফাইল দেখতে আগ্রহবোধ করবে। ওভারভিউ সুন্দর করে লিখবেন। কপিপেস্ট করা যাবেনা। নিজে লিখলে সবচেয়ে ভাল হয়। যদি না হয় অন্য কোথাও থেকে আইডিয়া নিতে পারেন। এখানে যে যে বিষয়ে আপনি দক্ষ সে বিষয়গুলো যোগ করতে পারেন। সর্বনিম্ন ৫ডলার করবেন, তাও প্রথম ফিডব্যাক পর্যন্ত। এরপর বাড়াতে থাকবেন। স্কিলটেস্ট ছাড়া ১০০% প্রোফাইল করা যাবেনা। প্রোফাইল শতভাগ করার জন্য স্কিল টেস্ট দিতে হয়। যার যেই বিষয়ের উপর জ্ঞান আছে এবং যে বিষয়ে কাজ করতে আগ্রহী সে সেই বিষয়ের উপর স্কিল টেস্ট দিতে পারেন।  স্কীল টেস্টে ভাল ফলাফল করলে সেটিকে প্রোফাইলে প্রদর্শণ করাবেন।  তাতে প্রোফাইল শক্তিশালী এবং প্রফেশনাল হবে।

upWork_

আপওয়ার্কে কাজের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় :
জবে ক্লিক করলে যে কাজটি ক্লায়েন্ট আপনাকে দিয়ে করাবে সেটির বর্ণনা আসবে। সেটি ভালভাবে পড়ে দেখুন, আপনার পক্ষে করা সম্ভব কিনা। কাজটির ধরন কি? ঘন্টাভিত্তিক হলে লিখা থাকবে আওয়ারলি, ফিক্সড হলে লেখা থাকবে ফিক্সড। তারপর থাকে কতদিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে, কাজটি কবে টিউন হয়েছে আরও অনেক কিছু আছে। পড়ে বুঝে নিতে হবে বাকিটুকু।

কাজটি করার জন্য ক্লায়েন্ট কিরকম যোগ্যতা লোক চাচ্ছে সেটা জানা যাবে। যেমন- ফিডব্যাক স্কোর ক্লায়েন্ট চায়।

১) আপওয়ার্কে কাজের জন্য আবেদন করাটাকে বিড বলা হয়। আপনার একাউন্টের জন্য নির্দিষ্ট ৩০টি বিড করার কোটা আছে। অর্থাৎ এক মাসে ৩০টা কাজের জন্য আবেদন করা যায়। সুতরাং আপনার এ কোটা ভালভাবে বুঝে ব্যবহার করবেন। শুধু শুধু বিড করে কোন আপনার কোটা নস্ট করে কোন লাভ নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত বিড কিনাও যায়।

২)  যে কাজটির জন্য বিড করবেন, সেটার বর্ণনা ভালভাবে পড়ে বুঝেনিন। যে কাজে বেশি বিড হয়নি, সেগুলোতে বিড করবেন, কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর বেড়ে যাবে। যদি আপনার প্রোফাইল নতুন হয়, তাহলে আপনার এ নিয়ম ভালভাবে পালন করতে হবে।

৩) খুব বেশি অনলাইনে থাকার চেষ্টা করুন, যাতে ক্লায়েন্ট আপনাকে কোন কারনে মেসেজ দিলে সেটার উত্তর দিতে দেরি না হয়।

৪) বিড করার আগে অবশ্যই ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করে নিবেন। ক্লায়েন্টের প্রোফাইল চেক করার সময় যে যে বিষয় লক্ষ্য করবেন:

ADs by Techtunes tAds
-   ক্লায়েন্ট এখন পর্যন্ত কত ঘন্টা কাজ করিয়েছে।

-   ক্লায়েন্টের পেমেন্ট মেথড ভেরিফাইড কিনা।

- যে টাইপ কাজে বিড করছেন,  সে টাইপের কাজ ক্লায়েন্ট আগে করায়ে থাকলে সেটা কত রেটে করা হয়েছে, সেটা খেয়াল করবেন।  সে অনুযায়ি বিড করবেন। বিড করার জন্য কভার লেটার লাগবে।

কভার লেটার লিখা:
কভার লেটার ইংরেজিতে লিখতে হয়। এজন্য ইংরেজিতে মোটামুটি জ্ঞান থাকা আবশ্যক। খুব সুন্দর ইংরেজী ব্যবহার করে, বড় কোন কিছু লেখাকে ভাল কভার লেটার বলেনা।

ক্লায়েন্টকে একদম পারলে একলাইনে লিখুন কাজটি পারবেন, তাহলে ক্লায়েন্ট খুশি হবে সবচাইতে বেশি। ক্লায়েন্টের সময়ের মূল্য আছে। বড় কভার লেটার দেখলে ভয়ে আর সেটা পড়বেনা ক্লায়েন্ট।

মনে মনে নিজেকে ক্লায়েন্ট ভাবুন। এবার ভাবুন, আপনাকে কেউ কিভাবে বললে আপনি কাজটি টাকা খরচ করে করবেন। তাহলে ক্লায়েন্ট আপনার যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহে পড়ে যাবে। কাজটি পারার ব্যাপারে কনফিডেন্ট প্রকাশ করুন। অন্যের কভার লেটার নিজে ব্যবহার করবেননা। আপনি ইংরেজী কম জানলেও না। কারন আপনি খুব ভাল কেউ ইংরেজী পারে এমন কাউকে দিয়ে হয়ত কভার লেটারটি লেখালেন্। ক্লায়েন্ট কাজ দেয়ার আগে আপনাকে ইন্টারভিউতে ডাকবে। তখন দেখল আপনার ইংরেজী লেখার ধরন অন্যরকম, তখন শুরুতেই আপনার ব্যাপারে বিশ্বাসটি উঠে যাবে। সেজন্য কাজটি আর আপনি পাবেননা। নিজের একই কভার লেটারও বারবার ব্যবহার করবেন না। অর্থাৎ যা লিখবেন, প্রত্যেকে বিড করার সময় কাজের বর্ণনা বুঝে লিখবেন। বেশি কথা না বলে আপনার কাজের স্যাম্পল দিন। এটি আপনার ৫০০০ লাইনের কথা বলার সমান কাজ করে দিবে। কভার লেটারে নিজের গুনগান গেয়ে কিংবা করুণা ভিক্ষা চেয়ে ক্লায়েন্টকে আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন না। প্রজেক্টটি ভালভাবে বুঝে সে অনুযায়ি কভার লেটার তৈরি করুন। কখনো ভুলেও আপনার ইমেইল, স্কাইপ আইডি, ইয়াহু, এগুলো কভার লেটারে দেওয়া যাবেনা। ক্লায়েন্ট আপনাকে নক করলে শুধুমাত্র তখনি আপনার কন্টাক্ট ডিটেইলস তাকে দিবেন।

কভার লেটারের গঠন :
কভার লেটারের প্রথমে স্যার বলে সম্বোধন করলে বাংলাদেশিরা পছন্দ করে। কিন্তু হাই, হ্যালো দিয়ে সম্বোধন করলে বিদেশীরা পছন্দ করে। কভার লেটার লিখার সময় নিজেকে এক্সপার্ট পরিচয় দিলে বায়ার আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। প্রজেক্টটি পড়ে আপনি যে ক্লায়েন্টের চাহিদা ভালভাবে বুঝেছেন, সেটি লেটারের প্রথমেই বোঝানোর জন্য কোন লাইন লিখতে পারেন। এবার বোঝানোর চেষ্টা করুন, আপনারে পক্ষে যে কাজটি করা সম্ভব। এ ধরনের কাজের ব্যপারে আপনার পূর্ব অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন। ক্লায়েন্টের রিপ্লাইয়ের জন্য আপনি অপেক্ষা করছেন, এ ধরনের কোন লাইন লিখুন। ধন্যবাদ সহকারে নিজের নাম উল্লেখ করে শেষ করেন লেটারটি।

কভার লেটার সম্পর্কিত আমার ভিডিওটি দেখুন:

https://www.youtube.com/watch?v=oCgXcIHqyHo

upwork

ADs by Techtunes tAds
কাজ শুরু করুন :
বায়ার যদি কাজের জন্য আপনাকে নির্বাচন করে তাহলে বায়ার আপনার ইন্টারভিউ নিবে। বায়ার যদি মনে করে আপনি কাজটি পাওয়ার যোগ্য তাহলে কাজটি পেতে পারেন। ঘণ্টাভিত্তিক কাজেরক্ষেত্রে আপওয়ার্ক থেকে আপওয়ার্ক টিম সফটওয়্যারটি নামিয়ে নিন, পিসিতে ইন্সটল করুন। এবার কাজ শুরু আগে কাজটি সিলেক্ট করে স্টার্ট – এ ক্লিক করুন। দেখতে পাবেন, কাজের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। সফটওয়্যারটি কিছুক্ষণ পরপর আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিণশট নিবে, সাথে সাথে সেটা আবার ক্লায়েন্টের কাছে পাঠিয়ে দিবে। কাজ শেষ হলে বায়ার যখন আপনাকে পেমেন্ট দিয়ে চুক্তি শেষ করবেন, তখন আপনার কাছে একটি নোটিফিকেশন আসবে। এবার বায়ার ফিডব্যাক দিবে, আপনাকেও দিতে হবে বায়ার সম্পর্কিত ফিডব্যাক। পূর্ণমান ৫-এর মধ্যে এ ফিডব্যাক হয়। উভয়পক্ষ ফিডব্যাক দিলেই কেবল একজন অপরজনেরটা দেখতে পাবেন। ভালো ফিডব্যাক পেলে পরবর্তীকালে বেশি কাজ পেতে সুবিধা হয়। বাজে ফিডব্যাক পেলে সেটি মুছে ফেলতে পারবেন। আপনি যদি বায়ারের পেমেন্ট ফেরত দিয়ে দেন, তাহলে আপনার প্রোফাইলে ওই বাজে ফিডব্যাক আর দেখা যাবেনা। নোটিফিকেশন পেইজে “গিভ রিফান্ড”  -এ ক্লিক করে আপনি বায়ারকে পেমেন্ট ফেরত দিয়ে দিতে পারবেন। বায়ার আপনাকে পেমেন্ট দেওয়ার পর সেই পেমেন্ট এক সপ্তাহের মতো পেন্ডিং থেকে তারপর আপনার ওডেস্ক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। আপনার বর্তমানে ব্যালান্স কত আছে এবং পেনডিং-এ কত আছে, সেটি জানার জন্য  “ট্রান্সেকশান হিস্টরি “-এ ক্লিক করুন।

আপওয়ার্কে সফলতার ব্যাপারে মনে রাখতে হবে নিচের বিষয়গুলো:
১) প্রফেশনাল এবং শতভাগ সম্পন্ন প্রোফাইল প্রস্তুত করতে হবে।

-         প্রোফাইলের ছবি হিসেবে হাসিখুশি স্পষ্ট চেহারার নিজের ছবি ব্যবহার করতে হবে।

-         ওভারভিউয়ে নিজের দক্ষতার ব্যপারে সংক্ষিপ্ত কিন্তু যেকোন বায়ারকে আকর্ষণ করার মত কিছু লিখতে হবে।

-         আগের কাজের অভিজ্ঞতাগুলো সুন্দরভাবে বর্ণনা সহকারে লিখতে হবে।

-         স্কীল টেস্ট পরীক্ষা দিয়ে ভাল নাম্বার অর্জন করতে হবে।

২)  বিড করার ক্ষেত্রে বুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে, কারণ বিড করার কোটা নির্দিষ্ট।

-         কোন জব টিউনের ১০ মিনিটের মধ্যে বিড করতে হবে।

-         ভালভাবে পারা সম্ভব শুধুমাত্র সে ধরনের কাজগুলোতেই বিড করতে হবে।

-         সুন্দর কভার লেটার লিখে বিড করতে হবে।

ADs by Techtunes tAds
৩) কভার লেটারের মাধ্যমেই বায়ারকে আকর্ষণ করতে হবে।

-         কভার লেটারটি কারও, এমনকি নিজের অন্য কোন কভার লেটারের কপি হতে পারবেনা।

-         কভার লেটারে বায়ারকে বুঝাতে হবে তিনটি বিষয়।

ক)  আপনি কাজের বর্ণনা ভালভাবে বুঝেছেন।

খ) কাজটি কিভাবে করতে চাচ্ছেন।

গ)   কাজটি আপনার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা না।

-         নিজের বেশি গুণগান গাওয়ার চাইতে পূর্বে করা একই ধরনের কাজের প্রমাণ শেয়ার করুন।



আপওয়ার্কের পেমেন্ট মেথড :
আপওয়ার্ক থেকে বাংলাদেশে সাধারণত ৩ বৈধ উপায়ে টাকা উঠানো যায়।

বাংলাদেশীদের জন্য আপওয়ার্ক ” লোকাল ফান্ড ট্রান্সফার”  নামে এক বিশেষ সার্ভিস চালু করেছে। যা ব্যাংক একাউন্ট থাকলে সরাসরি সেই একাউন্টে ” লোকাল ফান্ড ট্রান্সফার” আর মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে টাকা ট্র্যান্সফার করা যায়। প্রথম ট্রান্সফারে কোন ধরনের সার্ভিস ফি কাটবেনা। পরবর্তিতে প্রতিবার ট্রান্সফারে $ ৪. ৯৯ কাটবে।  অপরটি হচ্ছে পাইওনিয়ার ডেবিটকার্ডের মাধ্যমে আপওয়ার্ক থেকে আয় করা অর্থ সরাসরি এটিএম বুথের মাধ্যমে উঠানো যায়।  প্রতি বার $ ২ . ০০ কাটবে। আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে স্ক্রিল। স্ক্রিলকার্ড দিয়ে সবচেয়ে স্বল্পখরচে অর্থাৎ প্রতি ট্রান্সেকশান এ  $১ . ০০ ডলার খরচ করে আপওয়ার্ক থেকে টাকা উত্তোলন করা যায়।

পেমেন্ট উত্তোলনের ‍উপায়

অনলাইন হতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে যে আয় করা হয়, সেটি গ্রহণ করার বিভিন্ন ধরনের মাধ্যম রয়েছে। সকল ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাইটে হয়ত সবগুলোর মাধ্যমে ডলার গ্রহণ করা সম্ভব হয়না। মার্কেটপ্লেসগুলোর পেমেন্ট অপশনে গেলে জানা যায়, সেই সাইটগুলো কোন কোন পেমেন্ট মাধ্যম ব্যবহার করে। আবার সব পেমেন্ট মাধ্যম সকল দেশে প্রচলিত না। আজকের পর্বে সকল অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

৩য় পর্ব:  ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

৪র্থ পর্ব:  চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং

৫ম পর্ব: বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি

৬ষ্ঠ পর্ব: মার্কেটপ্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়

১। পেপ্যাল :
paypal
পেপাল বিশ্বের সবচাইতে জনপ্রিয় এবং অনলাইনে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত একটি মাধ্যম। বিশ্বের প্রায় সকল মার্কেটপ্লেস, অনলাইন স্টোর কিংবা যেখানে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের ব্যাপার আছে, সবজায়গাতেই পেপাল একটি গ্রহনযোগ্য একটি উপায়। বাংলাদেশসহ আরো অনেকগুলো স্বল্পন্নোনত দেশ এবং অনুন্নত দেশগুলোতে পেপালের সার্ভিস নাই। পেপাল দিয়ে অনলাইনে যেকোন কিছু কেনাকাটা করা যায়, যে কোন সার্ভিসের জন্য পেমেন্ট করা যায়। যেকোন জায়গার লেনদেনের বিনিময়ে পেপাল একটা নির্দিষ্ট পরিমান সার্ভিস চার্জ কেটে নেয়। কোন দেশের মূদ্রা ব্যাবহার হচ্ছে, কিভাবে অর্থের লেনদেন হচ্ছে প্রেরক ও প্রাপকের দেশ, পাঠানো অর্থের পরিমান ও প্রাপকের একাউন্টের ধরণের ওপরে ফী বা খরচ নির্ভর করে । ক্রেতা ও বিক্রেতা ভিন্ন মূদ্রা ব্যাবহার করেও পেপ্যাল ক্রেডিট কার্ড ব্যাবহার করে কেনাকাটা করলে পেপ্যাল আলাদা অর্থ গ্রহণ করতে পারে ।
পেপালে রয়েছে দুই ধরনের অ্যাকাউন্ট: ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং বিজনেস অ্যাকাউন্ট। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে মাসিক অনেক কম পরিমাণ অর্থ লেনদেন করা যায় কিন্তু ব্যবসায়িক কাজে বিশাল বড় কোন পরিমাণ অর্থ লেনদেনের জন্য অবশ্যই ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থাকতে হয়। পেপাল নিজে কোন ব্যাংক না, কিন্তু এটাকে ভার্চুয়াল ব্যাংক বলা যায়। পেপাল যেদেশ থেকে খোলা হয়েছে, সে দেশের যেকোন ব্যাংকের মাধ্যমে পেপালের ডলার উঠানো যায়।
পেপাল ওয়েবসাইটের লিংক: www.paypal.com

২। পাইওনিয়ার :
payoneer
পেপ্যালের সার্ভিস বাংলাদেশে না থাকার কারনে এদেশের ফ্রিল্যান্সারদের অনলাইন হতে আয়ের অর্থ উত্তোলন করা অনেক বেশি কষ্টকর ছিল। পাইওনিয়ার সে সমস্যাটা দূর করে দিয়েছে অনেকটাই। বর্তমানে প্রায় সকল মার্কেটপ্লেসেই পেপালের বিকল্প হিসেবে পাইওনিয়ার ব্যবহার হচ্ছে।
পাইওনিয়ার হল বিশ্বব্যাপী একটি ফ্রী মাস্টারকার্ড প্রদান কারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রিপেইড ডেবিট মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পেমেন্ট গ্রহন করতে পারবেন কিংবা পেমেন্ট করতে পারবেন।
পাইওনিয়ার এর মাধ্যমে আপনি যেসব সুবিধা পাবেনঃ
একটি বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্য ফ্রী মাস্টারকার্ড পাবেন ও আমেরিকার একটি ভার্চুয়াল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাবেন। পাইওনিয়ারের মাস্টার কার্ড দিয়ে পৃথিবীর যেকোনো দেশের মাস্টারকার্ড সাপোর্ট করে এরকম এটিএস বুথ থেকে ডলার উত্তোলন করা সম্ভব হয়। এমনকি বাংলাদেশ থেকেও সম্ভব হয়। তবে প্রতিবার এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে ৩ ডলার খরচ করতে হয়। আরেকটি মজার সুবিধা হচ্ছে, অন্য কারও পাইওনিয়ার অ্যাকাউন্ট থাকলে সেখানের রেফারাল লিংক ব্যবহার করে অন্য আরেকজন যদি নতুন অ্যাকাউন্ট করেম তাহলে নতুন অ্যাকাউন্টধারী ১ম ১০০ডলার কার্ডে প্রবেশ করা মাত্র রেফারাল লিংকের অ্যাকাউন্টে এবং নতুন অ্যাকাউন্টধারীর অ্যাকাউন্টে ২৫ডলার করে জমা হয়। এ পদ্ধতিতেও অনলাইনে কিছু ইনকাম করা সম্ভব হয়।
পাইওনিয়ারের লিংক: payoneer.com

তবে পাইওনিয়ারের অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আমার রেফারাল লিংকটা ব্যবহার করার অনুরোধ রইল।  এত সেবা করি আপনাদের, আমার এটুকু সেবা চাইতেই পারি।

রেফারাল লিংকের জন্য ক্লিক করুন।    এ লিংকে গিয়ে নিজে অ্যাকাউন্ট খুলুন। তাহলে আপনার অ্যাকাউন্টে ২৫ডলার বোনাস পাবেন। আমিও কিছু বোনাস পাব।

৩। নেটলার :
netplus-card

নেটলার মাস্টার কার্ড কে পাইওনিয়ারের ভালো বিকল্প হিসেবে ধরা যায় । পাইওনিয়ারের মত আপনি সব কিছুই এটা দিয়ে করতে পারবেন । এটার ভারচুয়াল মাস্টার কার্ডে এর সুবিধা হল এতে আপনার কোন মাসিক কিংবা বার্ষিক ফি নেই ।
তবে ভেরিফাইড করতে ১০-২০ ডলার কার্ডে আপলোড করতে হয় ।
প্রথমে www.neteller.com এ গিয়ে একটি ফ্রী অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন (অতিরিক্ত FX Fee পরিহার করার জন্য অ্যাকাউন্ট কারেন্সী USD কিংবা GBP সিলেক্ট করুন)। অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় যত্ন করে ইমেইল, পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোয়েশ্চন এবং উত্তর সমূহ, নেটেলার সিকিউর আই.ডি, এবং অন্যান্য তথ্য নিরাপদ স্থানে নোট করে রাখুন। অ্যাকাউন্ট তৈরি হয়ে গেলে এবার Login করুন এবং Login করার পর স্ক্রীনের বাম পাশের ‘Net+ Cards’ সেকশনে ক্লীক করুন, একটি পেজ ওপেন হবে যেখান থেকে আপনি Net+ MasterCard এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এই ধাপে আপনি দুইটি অপশন পাবেন, একটি হলো ‘Net+ Plastic’ এবং অন্যটি ‘Net+ Virtual’। ‘Net+ Virtual’ কার্ডটি ফ্রী, এবং ‘Add a card’ বাটনে ক্লীক করে সাথে সাথেই তৈরি করে নিতে পারবেন। কিন্তু প্লাস্টিক কার্ডটির জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে কমপক্ষে ১৩ ডলার ব্যালান্স থাকতে হবে। আর সব ঠিক থাকলে তিন দিনের ভিতর আপনার আপ্লিকেশন এপ্রুভ হবে । এপ্রুভড মেসেজ আপনার মেইল এ পাবেন । নেটলার মাস্টার কার্ড আসতে যত দিন লাগবে তত দিন আপনি আপনার প্রয়জনীয় কাজ চালাতে পারবেন নেটলার ভারচুয়াল কার্ড এর মাধ্যমে । এটা কোনো প্লাস্টিক কার্ড না । যে সব ওয়েব সাইট এ মাস্টার কার্ড এর সুবিধা আছে সেসব সাইট এ আপনি এটা দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন । ভারচুয়াল কার্ড এর নাম্বার পেতে আপনার সিকিউরড আইডি লাগবে ।

৪। স্ক্রিল:
skrill

স্ক্রিল হল লন্ডনভিত্তিক একটি কোম্পানি যা লেনদেন সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকে। স্ক্রিল শতভাগ নিরাপদ একটি সিস্টেম তাই নিরাপত্তার কথা না ভাবলেও চলবে । স্ক্রিল এ ভিআইপি অ্যাকাউন্ট খোলা যায় । স্ক্রিল ভিআইপি অ্যাকাউন্টে যত ইচ্ছা তত ট্রানজেকশন করা যায় এবং ট্রানজেকশন ফি খুব অল্প এবং আরও অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র একটা স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট করতে পারবেন।
সাইন আপ করার সময় সঠিক নাম ও ঠিকানা ব্যাবহার করতে হবে এবং সাইন আপ করার পর ইমেইল ভেরিফাই করতে হবে । ইমেইল ভেরিফাই করার পর কিছুদিনের মধ্যে স্ক্রিল থেকে গ্রাহকের ঠিকানা অনুযায়ী একটা চিঠি আসবে । এই চিঠিতে একটা পিনকোড থাকবে ঐ কোডটি অ্যাকাউন্টে দিলে স্ক্রিল অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে যাবে ।
এরপর স্ক্রিল এ অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে গেলে ” স্ক্রিল প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড” এর জন্য আবেদন করা যাবে । ” স্ক্রিল প্রিপেইড মাষ্টারকার্ড” এর জন্য প্রতি বছর ১২.৮৫ ডলার চার্জ কাটা হবে এবং প্রতিবার এটিএম বুথ দিয়ে টাকা উঠানোর জন্য ২.৩১ ডলার করে চার্জ কাটবে।
স্ক্রীলের ওয়েবসাইট লিংক: www.skrill.com

৫। পাইজা :
Alertpay-Payza

পাইজা আর্থিক লেনদেন (অনলাইন) সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকে। আগে এলার্টপে নামে পরিচিত ছিল । খুব সহজেই অনলাইন থেকে আয় করা অর্থ পাইজা কার্ড দিয়ে উত্তোলন করা যায় ।
পাইজা তে দুটি ক্যাটাগরির আছে ; প্রথমটি হচ্ছে পারসোনাল এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিজনেস । যেকোনো ক্যাটাগরিতে অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। পারসোনাল একাউন্টে কোন খরচ নেই কিন্তু বিজনেস অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে যদিও একটু খরচ আছে এবং অ্যাকাউন্ট খোলার সময় সঠিক নাম ও ঠিকানা ব্যাবহার করতে হবে।
সাইন আপ করার পর ইমেইল ভেরিফাই করতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করার জন্য দুটি পরিচয়পত্রের প্রমাণ দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র , পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , আপনার ঠিকানা প্রমানের জন্য একটি গ্যাস / বিদ্যুৎ / টেলিফোন বিল এর কপি। এই দুটি থেকে দুটি কপি স্কেন করে অ্যাকাউন্টে আপলোড করতে হবে তাতে অ্যাকাউন্ট সহজেই ভেরিফাই হয়ে যাবে। আর অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই হয়ে গেলে কার্ডের জন্য আবেদন করা যাবে । পাইজা কার্ড দিয়ে ATM বুথ থেকে টাকা উঠানো যায়। অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করা যায়।
পাইজার ওয়েবসাইট লিংক: www.payza.com

৬) ওয়্যার ট্রান্সফার:
wire-transfer

ওয়্যার ট্রান্সফার মানে হচ্ছে লোকাল ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা লেনদেন। অনেক মার্কেটেপ্লেস এ সুযোগটা দিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকাটা গ্রহণ করবে, সেই ব্যাংকের নিজস্ব সুইফট কোডটা ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটা ব্যাংকের নিজস্ব সুইফট কোড রয়েছে। এ কোড সম্পর্কে জানতে গুগলে সার্চ করলে কিংবা সেই ব্যাংকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেওয়া যায়। ওয়্যার ট্রান্সফারে সার্ভিস চার্জ একটু বেশি কাটে।

বহুল প্রচলিত পেমেন্ট মাধ্যমগুলো নিয়ে উপরে আলোচনা করলাম। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু ছোট ছোট মাধ্যম রয়েছে, যা খুব বেশি ব্যবহৃত হয়না। সেজন্য সেগুলোকে আলোচনাতে আর নিয়ে আসলাম না।

মার্কেটপ্লেসের বাইরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ পাওয়ার উপায়

আমাদের দেশে আপওয়ার্ক (পুর্বের নাম, ওডেস্ক) নিয়ে এত বেশি মাতামাতি হয়েছে যে সবার মধ্যে ধারণা ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্কে কাজ করতে হবে। আমি সহ আরো অনেকে যখন বলি আমি ফ্রিল্যান্সিং করি, তখন অনেকেই জানতে চায়, আপওয়ার্কে কত ঘন্টা কাজ করেছি। যদি বলি আপওয়ার্কে আমার কোন প্রোফাইল নাই, তখন সবার কাছেই বিষয়টা আশ্চয লাগে। তাই সবার মধ্যের এ ভুল ধারণাটি (ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্ক) দূর করার জন্যই  আজকের এ পর্বটি।

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

৩য় পর্ব:  ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

৪র্থ পর্ব:  চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং

৫ম পর্ব: বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি

 earn money

কেন এটি ভুল ধারণা?
আমরা বাংলাদেশের কোন চাকুরী খোজার জন্য সাধারণত বিডিজবস এ যাই। কিন্তু তাই বলে কি কারও কাছে মনে হয়, বাংলাদেশের সকল চাকুরীর সংবাদ বিডিজবসেই থাকে? প্রচুর প্রতিষ্ঠান আছে তাদের লোক নেওয়ার জন্য কখনওই বিডিজবসে কোন নিউজ প্রকাশ করেনি।  বাংলাদেশের চাকুরীর খোজার ক্ষেত্রে বিডিজবস যেরকম একমাত্র প্লাটফরম নয়, তেমনি সারা বিশ্বের কাজের খোজ নেওয়ার জন্য কিভাবে আপওয়ার্ক একমাত্র জায়গা হতে পারে, সেটি সবাই নিজেকে প্রশ্ন করুন। বাস্তবতা হচ্ছে অনলাইনে সারাবিশ্ব থেকে যত পরিমান কাজ পাওয়া যায় তার মাত্র 23% এ মার্কেটপ্লেসগুলোতে পাওয়া যায়। তাহলে বাকি কাজগুলো কোথায় পাওয়া যায় সেটিও আমি এ পর্বে লেখার চেষ্টা করব।

এ ভুল ধারণাটি ক্ষতি করছে সমাজের, কিভাবে?
আমাদের দেশের শূধু মাত্র নতুনদের নয় , যারা অনেকদিন ধরে কাজ করছেন, কিংবা যারা কাজ শিখাচ্ছেন, তাদের মধ্যেও ধারণার অভাব রয়েছে। অনেকেই জানেনা যে আপওয়ার্ক ছাড়াও আরও কতভাবে আয় করা যায়। এজন্য সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে, অনলাইনে আয় মানেই আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্টস থাকতে হবে। বিষয়টা এমন যে, অনেকেই জানেনা উইন্ডোজ একটি অপারেটিং সিস্টেম। এরকম আরও অনেক অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। কিন্তু অপারেটিং সিস্টেম শব্দটি বললে চিনবেনা কেউ। উইন্ডোজ বললেই চিনে সবাই।

অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে আপওয়ার্ককে শুধু চেনার কারনে ক্ষতি হচ্ছে নিচের কয়েকটিভাবেঃ

-   যারা অনেক স্বপ্ন নিয়ে কাজ শিখে আপওয়ার্ক থেকে আয়ের চেষ্টা শুরু করেন, তারা সেখানে কোন কাজ না পেয়ে হতাশ হয় কিংবা আউটসোর্সিং সম্পর্কে ভুল ধারণার জন্ম নেয় তাদের মনে।

-   কাজ না পেতে এক সময় অনেক কম রেটে বিড শুরু করে দেয়। কাজের রেট কমালে সবার জন্য ক্ষতির কারণ হয়, যে ক্ষতির সম্মুখীন ইতিমধ্যে সবাই হচ্ছে।

-   কাজ পেতে স্পামিং করছে, ডুপ্লিকেট কভার লেটার ব্যবহার করছে। কাজ না বুঝেই বিড করছে। আর সেটার খারাপ ফল ভোগ করছে অন্য দক্ষ বাংগালীরা। ক্লায়েন্টরা এখন বাংগালীদের দিয়ে কাজ করাতে এখন কম আগ্রহী। সত্যিকারের যারা কাজ পারেন, তাদেরকেও এখন সঠিকভাবে ক্লায়েন্টরা চিনতে পারছেননা।

-   আপওয়ার্ককে কাজ পাওয়ার কথা বলে এখন আলাদা নতুন নতুন প্রতারণার ব্যবসারও তৈরি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ইতিমধ্যে অনেকে প্রতারিত হয়ে নিজের অনেক অর্থ নষ্ট করেছে এবং তাদের মনেও অনলাইনে আয় নিয়ে বাজে একটি ধারণা ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে।

-   শুধু আপওয়ার্ককেই অনলাইনে আয় মনে করার কারনে, যোগ্যতা তৈরির আগেই আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে বিড করা শুরু করছে। সেকারনে আপওয়ার্কে  দক্ষ্য বাংলাদেশির চাইতে অদক্ষ্য বাংলাদেশির সংখ্যা অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যা বাংলাদেশীদের দক্ষতার ব্যাপারে অন্যদেশের ক্লায়েন্টদেরকে নেগেটিভ মেসেজ দিচ্ছে, যা ভবিষ্যতে অনেক বড় ক্ষতির কারন হবে। যদিও ইতিমধ্যেই সেই ক্ষতিটা সবাই অল্প স্বল্প ভোগ করা শুরু করেছে।



বিড করা ছাড়াও আর কিভাবে কাজ পাওয়া যায়?
make money

১) ক্লায়েন্ট এসে সার্ভিস কিনবে

এখানে আমি দুটি বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের নাম বলব, যেখানে  কাজের জন্য বিড করতে হবেনা। এসব মার্কেটপ্লেসে শুধু লিখে রাখতে হয় , কি কাজ করতে চান। বায়ারই খুজে বের করে কাজ দিবে। এরকম দুটি মার্কেটপ্লেসে নাম হচ্ছেঃ

-   Peopleperhour.com

-   Fiverr.com

এসব মার্কেটপ্লেসে শুধুমাত্র গিগ হিসেবে নিজের সার্ভিস লিখে রাখতে হয়। অর্থাৎ এভাবে লিখে রাখবেন, আমি একটি লোগো ডিজাইন করতে চাই, যার জন্য দাম রাখব ৫০ ডলার। যারা এ রেটে আপনাকে কাজ করতে চায়, তারাই খুজে বের করবে আপনাকে। প্রয়োজন নাই, সারাদিন মার্কেটেপ্লেসে বসে থেকে নজর রাখা বায়ার নতুন কোন কাজের জন্য লোক খুজছে কিনা, তারপর সে কাজে গিয়ে বিড করা। এ কষ্টটা এসব মার্কেটপ্লেসগুলোতে বায়ার নিজে করে।



২) সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো কাজ পাওয়ার অন্যতম ক্ষেত্রঃ

আমাদের মনে রাখত হবে, আমরা সাধারণ জনগণ যেমন সোশ্যালমিডিয়া সাইটগুলো নিয়মিত ব্যবহার করি, তেমনি দেশের প্রেসিডেন্ট কিংবা অন্য বড় বড় ব্যক্তিরা কিংবা বড় বড় কোম্পানীর মালিকরাও নিয়মিত এসব সাইটগুলোতে নিয়মিত প্রবেশ করে। এজন্য এসব জায়গাগুলো থেকেও প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। বিশেষ করে লিংকডিন (linkdin) থেকে কাজ পাওয়া যায় অনেক বেশি।

বিশ্বের বেশিরভাগ বায়াররাই মার্কেটপ্লেসে গিয়ে তার কাজের জন্য নতুন কাউকে খুজে বের করাটাকে বিরক্তিকর কাজ মনে করে (ঠিক যেমন যে কাজ খোজে তার জন্য মার্কেটপ্লেসে কাজ খোজাটা বিরক্তিকর মনে করে)। লোকাল যে কোন চাকুরীর ক্ষেত্রে যেমন সবার প্রথম নিজের পরিচিতদের ম মধ্যে যোগ্য কেউ থাকলে তাকেই সবাই নিতে চায়, কারণ পরিচিত একজনের ব্যপারে রিস্ক অবশ্যই কম থাকে। অনলাইনের এ যুগে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের যেকোন কারও সাথেইও পরিচিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে আর পরিচিত হওয়ার সে সুযোগটি করে দিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো। এসব সাইটগুলোতে নিজেকে প্রফেশনাললি, নিজেকে কাজের দক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করুন। সোশ্যাল মিডিয়া কাজ খোজার জন্য অনেক শক্তিশালী একটি মাধ্যম। ফেসবুক, লিংকডিন মার্কেটপ্লেস হতেই পেতে পারেন প্রচুর কাজ। তাছাড়া গ্রাফিকসের জন্য কাজ পেতে চাইলে নিচের দুটি মার্কেটপ্লেসে যুক্ত থাকতে পারেন। আমার পরিচিত প্রচুর ডিজাইনার এখান থেকেই কাজ পাচ্ছে।

১)বিহেন্স (https://www.behance.net/)

২) ড্রিবল (https://dribbble.com/)

৩) ব্লগিংয়ের মাধ্যমে কাজ খোজাঃ

ব্লগিং কাজ খোজার অন্যতম একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ব্লগিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষদের কাছে নিজের কাজের দক্ষতা প্রমাণ করা সম্ভব।  যে বিষয়ের উপর কাজ পেতে চাচ্ছেন, সে বিষয়ের উপর নিজেকে দক্ষ হিসেবে প্রকাশ করতে কিংবা নিজেকে ব্রান্ডিং করতে ব্লগিং অনেক বেশি কাযকরী। আপনি যখন নিজেকে দক্ষ হিসেবে সবার কাছে ব্রান্ড করতে পারবেন, তখন কাজ খুজতে হবেনা। বায়ার নিজে এসে আপনাকে কাজ করার জন্য অফার করবে এবং সেটি হবে অবশ্যই যেকোন মার্কেটপ্লেসের চাইতে কমপক্ষে দ্বিগুন রেটে। বিখ্যাত ব্লগিং সাইটগুলোতে গেস্ট হিসেবে ব্লগিং  করে কিংবা নিজের পার্সোনাল ব্লগ তৈরি করে ব্লগিং শুরু করতে পারেন, যার লক্ষ্য থাকবে আপনার দক্ষতাকে ব্রান্ডিং করা।

যত সময় ব্যয় করবেন মার্কেটপ্লেসে কাজের জন্য বিড করে কিংবা কাজ খুজে, ব্লগিংয়ের জন্য তার চাইতে বেশি সময় লাগবেনা। কিন্তু আপনার একেকটি ব্লগপোস্ট আপনাকে বাচিয়ে রাখবে বহুদিন।

৪) ফোরাম পোস্টিংয়ের মাধ্যমেঃ

অনেকে ভাবছেন লেখালেখি আপনার দ্বারা সম্ভব হবেনা। সুতরাং ব্লগিং করে কাজ যোগাড় বুদ্ধিটি আপনার কাজে লাগবেনা। সোশ্যাল মিডিয়াতে কিভাবে নিজের স্কীল হিসেবে প্রকাশ করব, সেটিও আমার দ্বারা হবেনা মনে করছেন, তারা ফোরাম পোস্টিং করে নিজে দক্ষতা সবার সামনে প্রকাশ করতে পারেন। ব্লগিংয়ে লেখার জন্য টপিকস খুজতে হলেও ফোরামে সেই ঝামেলাতে পড়তে হবেনা। কারণ এখানে বিভিন্ন জনের প্রশ্নের উত্তরগুলো ভালভাবে আকর্ষণ করার মত করে দিলেই হবে। এরকম নিয়মিত কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর উত্তর দিতে থাকলে সেই বিষয়ের উপর আপনার দক্ষতা সবার কাছেই প্রকাশিত হয় অর্থাৎ সেই দক্ষতা বিষয়ে নিজের ব্রান্ডিংটা হয়ে যায়, নিজের ব্রান্ডিং হলে কি সুবিধা হবে সেটি আগের প্যারাতে আলোচনা করেছি।

৫) ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমেঃ

ইমেইল মার্কেটিং সম্পর্কিত বেসিক জ্ঞান থাকলে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে যোগাযোগের মাধ্যম খুজে বের করে তাদেরকে অফার জানিয়ে নিয়মিত মেইল করুন। তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। এভাবে প্রচুর কাজ পাওয়া যায়। বড় আকারে কাজ পেতে চাইলে এ পদ্ধতি অনেক বেশি কাযকরী। সবারই ইচ্ছা থাকে ভবিষ্যতে বড় আইটি প্রতিষ্ঠান তৈরির।  যারা এরকম চান, তাদের জন্য এ পদ্ধতিটি  বেশি কাযকরী। তবে আগে একটি প্রফেশনাল পোর্টফলিও ওয়েবসাইট তৈরি করে নিলে বেশি ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে।

৬) পোর্টফলিও সাইট তৈরি করে এসইও করার মাধ্যমেঃ

নিজের একটি পোর্টফলিও সাইট তৈরি করে সেই ওয়েবসাইটকে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড দিয়ে গুগল সার্চের ফলাফলের প্রথমে নিয়ে আসতে পারলে সেখান থেকে কাজ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ওয়েবসাইটকে আগে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হয়। এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলো র‌্যাংকিং এর পাশাপাশি ট্রাফিক অ্যানগেজমেন্টর উপরই কাজ পাওয়া বেশি নির্ভর করে। আর এভাবে কাজ যোগাড় করলে সারাজীবনই কাজ পেতে থাকবেন।

Social_Media_

৭) ভিডিও মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে :

ইউটিউবে নিজের একটি ভিডিও  চ্যানেল খুলে সেখানে যে সম্পর্কিত কাজ করতে আগ্রহী সে সম্পর্কিত নিজের তৈরি ভিডিও তৈরি করে নিয়মিত আপলোড করুন। এমন ভিডিও তৈরি করতে হবে, যাতে সেটা দেখে অন্যদের ভিতর সেই কাজের ব্যাপারে আপনাকে অভিজ্ঞ হিসেবে ধারণাটা পাকাপোক্ত হবে। এ ভিডিওকে ইউটিউবের সার্চের প্রথমে নিয়ে আসার কাজটিও করতে হবে। না হলে ভিডিওটি বেশি মানুষের নজরে আসবেনা। বেশি মানুষ আপনার ভিডিও না দেখলে উদ্দেশ্য সফল হবেনা অর্থাৎ কাজ পাবেননা।

৮) ব্লগ কমেন্টিংয়ের মাধ্যমেঃ

ভাল ভাল কিছু ব্লগ রয়েছে যেগুলো প্রচুর মানুষ ভাল কিছু শিখার জন্য যায়। সারা বিশ্বের প্রচুর মানুষ নিয়মিত এসব সাইটগুলোতে ভিজিট করে। আপনি যদি এসব সাইটে ব্লগ লিখতে পারেন, তাহলে টার্গেটেড লোকদের কাছে খুব সহজে নিজের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করতে পারবেন। কিন্তু ধরে নিলাম লেখালেখির অভ্যাস নেই। কোনভাবেই লিখতে পারবেননা। তাহলে কি উপায়? এসব ব্লগে প্রকাশিত পোস্টগুলোতে সবার নজরে আসার মত করে কমেন্ট করুন নিয়মিত। এসব কমেন্টের মাধ্যমেও আপনার নিজেকে ব্রান্ডিং করার সুযোগ আছে। সাধারণ দেখা যায়, ৪-৫টা ভাল কমেন্টের পর সেই কমেন্টকারী ব্যক্তির পরিচয় কিংবা যোগাযোগ করার মাধ্যম অন্যরা খোজার চেষ্টা করে এবং সোশ্যালমিডিয়াতে সেই কমেন্টকারী ব্যক্তির সাথে যুক্ত হয় এবং নজরে পড়ার মত ৮-১০টা কমেন্ট করতে পারলে কাজ পাওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হয়।

৯) প্রেজেন্টেশন স্লাইড আপলোডের মাধ্যমেও কাজ পাবেনঃ

স্লাইডশেয়ার (slideshare.net) নামে একটি সাইট রয়েছে যেখানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আপলোড করা হয়। এ সাইটের লিংকগুলো গুগলে খুব সহজে র‌্যাংক পায়। গুগলের কাছে যেমন জনপ্রিয় এ সাইটটি। তেমনি প্রচুর মানুষের কাছেও জনপ্রিয়। আর সেজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর মানুষ এ সাইটে এসে নিয়মিত তাদের চাহিদা অনুযায়ি বিষয় সার্চ করে। সেজন্য এ নিজের একটি প্লানিং ঠিক করেন। প্রতি মাসে কমপক্ষে ২টি প্রেজেন্টেশন এ সাইটটিতে পোস্ট করবেন। এ প্রেজেন্টেশনটির কন্টেন্ট হবে অবশ্যই  অন্যদের জন্য উপকারী। তবে প্লেজেন্টেশনটির শেষ স্লাইডে আপনি কাজ চেয়ে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। এভাবেও অনেককে আমি কাজ পেতে দেখেছি।

১০) অন্য একটি এক্সক্লুসিভ টিপসঃ

আমরা অনেক সময় দেখি ফেসবুকে নিজেদের বন্ধু লিস্টে মধ্য থেকে নিচের মত পোস্ট দেখি।  “একজন লোগো ডিজাইনার লাগবে। কেউ থাকলে আওয়াজ দিন।”

তখন আমরা কাজ জানা থাকলে সেখানে গিয়ে হয়ত অনুরোধ করি কাজটি পাওয়ার জন্য। বন্ধু লিস্ট থেকে হয়ত মাঝে মাঝে ১-২দিন এরকম দেখি। এবার এমন একটি টিপস দিব, যার মাধ্যমে সারা বিশ্বের যেকোন প্রান্ত থেকে যত মানুষ এরকম লোক চেয়ে তাদের নিজেদের প্রোফাইলে স্ট্যাটাস দিয়েছে, তা একবারে খুজে বের করতে পারবেন। অবশ্য এটি এখনও ফেসবুকে করা সম্ভবনা। কাজটি করার জন্য টুইটারে যেতে হবে।

টুইটারে নিজের অ্যাকাউন্টে লগইন করে এ লিংকটিতে (https://twitter.com/search-advanced) প্রবেশ করুন। সেখানের সার্চ অপশনটি কাজে লাগিয়ে খুজে বের করুন, কারা কাজ করানোর জন্য লোক খুজছে। সেই সব লোকদের পোস্টে গিয়ে কমেন্টে আপনার অফারটি দিয়ে আসুন। সেই অফার পছন্দ হলে কাজ পেয়ে যেতে পারেন।

যে কোন মাধ্যমেই কাজ খুজতে যান, নিজের কাজের বিষয়ে একটি পোর্টফলিও অবশ্যই তৈরি করে নিতে কেউ ভুলবেননা। কারণ এ পোর্টফলিওতে থাকা কাজগুলো দেখেই বায়ার কাজ দিতে আগ্রহী হবে। বায়ারের সাথে কাজের ব্যাপারে কথা বলার শুরুতে আগের করা কাজ অবশ্যই দেখতে চাইবে।



বিখ্যাত মার্কেটপ্লেসের পরিচিতি

অনলাইনে যখন কাজ করতে যাবেন , তখন কাজ কোথায় পাবেন, সবার মনের ভিতরের সেই উত্তরটি নিয়ে সাজিয়েছি আজকের এ পর্বটি। অনলাইনে কাজ পাওয়ার জন্য মার্কেটপ্লেসগুলো মানুষের কাছে প্রিয় জায়গা। অনলাইনে অনেকধরনের মার্কেটপ্লেস রয়েছে। মার্কেটপ্লেস কি সেটা নিয়ে আগে আলোচনা করা উচিত।

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

৩য় পর্ব:  ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

৪র্থ পর্ব:  চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং

মার্কেটপ্লেস কি?
small-business-outsourcing

অনলাইনে এমন ওয়েবসাইট যেখানে বায়াররা তাদের কাজ করার মত দক্ষ লোক বা ফ্রিল্যান্সার খোজ করতে আসে। আবার যারা ফ্রিল্যান্সার, তারা কাজ খোজার জন্য এসব সাইটগুলো প্রবেশ করে। অনেক ফ্রিল্যান্সারদের মধ্য হতে যাচাই বাছাই করে বায়ার তার কাজের জন্য যোগ্য কাউকে বাছাই করে কাজ দেয়। এসব সাইটগুলোকেই মার্কেটপ্লেস বলে। মার্কেটপ্লেসগুলো বায়ার এবং ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী হিসেবে কাজ করে। বায়াররা এসব মার্কেটপ্লেসকে মূলত পেমেন্ট করে। সেই পেমেন্ট ফ্রিল্যান্সারদের মার্কেটপ্লেসের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। পরে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সেই ডলারগুলো উঠানো যায়। এসব মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সারদের কাজের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের রেটিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলো দেখেই বায়াররা তাদের কাজের জন্য যোগ্য ফ্রিল্যান্সার বাছাই করতে পারেন।
অনলাইনে অনেকগুলো মার্কেটপ্লেস রয়েছে। বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, বিভিন্ন ধরনের মার্কেটপ্লেস রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি মার্কেটপ্লেসের সাথে সংক্ষেপে পরিচিত করার চেষ্টা করব। ভবিষ্যত পর্বগুলো বিস্তারিত আকারে পোস্ট আসবে।

আপওয়ার্ক:
বাংলাদেশের মানুষদের কাছে জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের নাম, আপওয়ার্ক। ওয়েব ঠিকানা: upwork.com । এখানে বায়াররা বিভিন্ন কাজ নিয়ে জব পোস্ট করে। কাজ করতে আগ্রহী ফ্রিল্যান্সাররা সেই কাজ পাওয়ার জন্য বিড করে। এসব বিড দেখে বায়াররা তাদের কাজের জন্য যোগ্য লোককে বাছাই করে।
এখানে বায়াররা দুইভাবে কাজ দেয়। একটা হচ্ছে ফিক্সড রেট, আরেকটা আওয়ারলী রেট।

improve-upwork
আপওয়ার্কে সফলতার ৩টি টিপস:
- সঠিকভাবে প্রোফাইল সাজানো
- বিভিন্ন দক্ষতা বিষয়ক পরীক্ষা দেয়া।
- বিড করার জন্য কভার লেটার
আপওয়ার্কের মত আরও মার্কেটপ্লেসের নাম: ফ্রিল্যান্সার.কম, গুরু.কম

ফাইভার:
আপওয়ার্কে বায়াররা কাজের জন্য ফ্রিল্যান্সার চেয়ে পোস্ট করে। আর ফাইভারে বিষয়টা উল্টো ঘটে।
ফাইভারে ফ্রিল্যান্সাররা তাদের সার্ভিস অফার করে পোস্ট করে, যাকে বলা হয় গিগ। এসব গিগগুলো ৫ ডলার- ২০০ ডলারে বিক্রি হয়। এ মার্কেটপ্লেসের লিংক: fiverr.com
কিন্তু ফাইভারে আগেই আপনাকে গিগ বানিয়ে রাখতে হবে এবং ক্লাইন্টরা সেটা কিনবেন। ফাইভারে মূলত সবধরনের কাজ পাওয়া যায় । আপনি যেকোন একটি সেক্ট্রের কাজ শিখেই এখানে কাজ করতে পারবেন।
যারা মার্কেট প্লেসে একবারে নতুন তারা খুব সহজেই ফাইভার থেকে কাজ পেতে পারেন।

fiverr
ফাইভারে সফলতার ৩টি টিপস:
- ফাইভারে বিড করতে হয় না তাই বিড করা নিয়ে নতুনদের চিন্তা করতে হয় না ।
- বিশেষ করে গিগের উপর গুরুত্ব দিতে হয় ভালো কি ওয়ার্ড দিয়ে গিগ তৈরি করতে পারলে অনেক ডলার আয় করা সম্ভব।
- গিগকে যদি সোশ্যালমিডিয়া কিংবা অন্য কোনভাবে প্রমোশন করা যায়, তাহলে শুরুতে অল্প দিনেই বিক্রি শুরু হয়ে যায় এবং ভাল বিক্রি হয়।

পিপল পার আওয়ার:
এটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি অনলাইন মার্কেটপ্লেস। এখানে বায়ার সহজে জবের জন্য অফার করতে পারে । আবার যে কাজ করবে সেও তার স্কিল সেল করতে পারবে । এখান থেকে কাজ কিনে আবার এই মার্কেটপ্লেসে সেল করতে পারবেন। এই মার্কেটপ্লেসে ফিক্সড এবং আওয়ার্লি জব করার সুযোগ আছে । এ মার্কেটপ্লেসের লিংক: peopleperhour.com

people-per-hour
পিপল পার আওয়ারে সফলতার ৩টি টিপস:
- এই মার্কেটপ্লেসে প্রচুর পরিমাণে কাজ পাওয়া যায়।
- এই মার্কেটপ্লেসের ফিচারগুলো খুব সহজ । আওয়ার্লি কাজ করতে গেলে আলাদা কোন সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে হয় না।
- কাজের যথাযথ পারিশ্রমিক পাওয়া যায় এবং কাজের গ্রহণযোগ্যতা ও অনেক।

99 ডিজাইন :
যারা গ্রাফিক্স ডিজাইন জানেন তাদের জন্য উপযুক্ত মার্কেটপ্লেস । এই সাইটটিতে শুধুমাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইনেরা কাজ করতে পারে। এই মার্কেটপ্লেসে বিজনেস কার্ড ডিজাইন , লোগো ডিজাইন, ওয়েবসাইট ডিজাইন, বাটন ডিজাইন ইত্যাদি কাজ পাওয়া যায়। এখানে ডিজাইন সম্পর্কিত কাজের প্রতিযোগীতাতে জয় লাভ করার মাধ্যমে আয় করতে হয়। এ মার্কেটপ্লেসের লিংক: 99designs.com
এ মার্কেটপ্লেসে ডিজাইন সম্পর্কিত প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। কোন বায়ারের কোন ডিজাইনের কাজ প্রয়োজন হলে তারা এ মার্কেটপ্লেসে এসে প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সাররা এসব প্রতিযোগীতাতে অংশগ্রহণ করে। নিদ্দিষ্ট দিন পযন্ত প্রতিযোগীতা চলে, শেষের দিন বায়ার, যার কাজটি সুন্দর হয়েছে তাকে বিজয়ী ঘোষনা করে। পরে বিজয়ীকে ঘোষিত অর্থ প্রদান করা হয়। বিড করার ঝামেলা এ মার্কেটপ্লেসে নাই। সাধারণত একটা লোগো প্রতিযোগীতাতে জিতলে ৩০০ডলার থেকে ১২০০ডলার পযন্ত আয় করা যায়।

99designs
99 ডিজাইনে সফলতার ৩টি টিপস:
- প্রতিযোগীতাগুলোতে নতুন পুরাতন সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে, এবং সবা্রই সেখানে জেতার সুযোগ থাকে।
- প্রতিযোগীতে একজন প্রতিযোগী যতগুলো ইচ্ছা ডিজাইন সাবমিট করতে পারে।
- অন্য প্রতিযোগীদের ডিজাইনও দেখা যাওয়ার কারনে ডিজাইন কনসেপ্ট বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে।

ইনভাটো:
ইনভাটোর অনেকগুলো ওয়েবসাইট রয়েছে। গ্রাফিকরিভার(graphicriver.net) হচ্ছে গ্রাফিকডিজাইনারদের জন্য, থিমফরেস্ট (themeforest.net) হচ্ছে ওয়েবডিজাইনারদের জন্য। গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা তাদের ডিজাইন যেমন: লোগো, ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে সকল ধরনের ডিজাইন সম্পর্কিত পণ্য এখানে বিক্রি করতে পারে এবং ওয়েব ডেভেলপার হলে এইচটিএমএল টেমপ্লেট, সি এস এস , ওয়ার্ডপ্রেস থিম সেল করা যায়। ক্রিয়েটিভ ডিজাইন করতে পারলে থিমফরেস্টে এবং গ্রাফিকরিভারে প্রচুর ইনকাম সম্ভব। ভালমানের ডিজাইন না হলে খিমফরেস্ট কতৃপক্ষ ডিজাইন অ্যাপ্লুভ করবেনা। একটা ডিজাইন অ্যাপ্লুভ হলে সেটা সারাজীবন যতবার বিক্রি হবে, সেখানে থেকে ততবারই ইনকাম হবে। অর্থাৎ একটা ডিজাইন সারাজীবনের ইনকাম।

envato1
ইনভাটোতে সফল হওয়ার ৩টি টিপস:

- কাজ করার সময় কপি না করা ভালো , তাতে ডিজাইন অ্যাপ্লুভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
- ডিজাইন যদি ক্রিয়েটিভ হয়, তাহলে বিক্রি পেতে সময় লাগেনা।
- ডিজাইনের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য সোশ্যালমিডিয়া মার্কেটিংসহ এসইওর অন্যান্য প্রসেসগুলো কাজে লাগালে ভাল ফল পাওয়া যায়।

মাইক্রোওয়ার্কার:
এই মার্কেট প্লেসে সব ছোট ছোট কাজগুলো পাওয়া যায় । যারা একবারে নতুন তাদের জন্য এই মার্কেট প্লেসে কাজ করা অনেক সহজ। ফোরাম পোস্টিং, সাইন আপ, ফেসবুক লাইক-ভোট, টুইটার টুইট-রিটুইট, ক্লিক-সার্চ, বুক মার্ক, ইয়াহু এনসার এই কাজ গুলো মাইক্রোওয়ার্কারে খুব বেশি পাওয়া যায়। কাজের জন্য বিড করতে হয় না । কাজ গুলো খুব ছোট হয় এবং ৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে কাজ গুলো করা যায়। যত মার্কেট প্লেস আছে সবচেয়ে সহজ এই মার্কেট প্লেসে কাজ করা। এ মার্কেটপ্লেসের লিংক: microworkers.com

microworker-3

মাইক্রোওয়ার্কারে সফল হওয়ার ৩টি টিপস:
- নিজে করতে পারবেন, এরকম কাজগুলোতে শুধুমাত্র অ্যাপ্লাই করবেন।
- শুরুতে সময়মত কাজ ডেলিভারি দিয়ে বায়ার হতে ভাল ফিডব্যাক যোগাড় করার চেষ্টা করুন।
- কাজের বর্ণনা ভালভাবে পড়ে তারপর কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করবেন।

ক্লিকব্যাংক:
এটি একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেস । এখানে সদস্য হয়ে বিভিন্ন পন্য প্রচারের লিংক নিজের সাইটে রাখতে পারেন এবং সেই লিংকের মাধ্যমে মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে পণ্য বিক্রি হলে ফ্রিল্যান্সাররা বিক্রি হতে একটা নির্দিষ্ট কমিশন পাবে। ক্লিক ব্যাংকের প্রোডাক্ট গুলো ডিজিটাল প্রোডাক্ট। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ইবুক, টিউটোরিয়াল সিডি, সফটওয়্যার সিডিসহ ইত্যাদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য এখানে পাওয়া যায়। ক্লিকব্যাংক একটি মার্কেটপ্লেস। সেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কিত বিভিন্ন অফার নিয়ে আসে। ফ্রিল্যান্সাররা সেই সব অফার নিয়ে অ্যাফিলিয়েশন করে। যতবেশি প্রোডাক্ট বা সেবা বিক্রি করা যায়, ততবেশি কমিশন জমা হবে। এ সাইটের লিংক: clickbank.com

click bank

ক্লিক ব্যাংকে সফল হওয়ার ৩টি টিপস:
- এসইও এবং ডিজিটাল মার্কেটিং ভাল জানা থাকলে বিক্রি বেশি হবে।
- টার্গেট ক্লায়েন্ট নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ি মার্কেটিং পরিকল্পনা করলে বিক্রি বেশি পাওয়া যাবে।
- শুরুর দিকে কম প্রতিযোগিতার নিশ পছন্দ করে কাজ করলে ভাল বিক্রি পাওয়া যায়।

অ্যামাজন :
অ্যামাজন হচ্ছে অনলাইনে পণ্য বিক্রির সবচাইতে বড় স্টোর। অ্যাফিলিয়েশনের ক্ষেত্রেও সবচাইতে বড় সেক্টর হচ্ছে অ্যামাজন। এখানে পণ্যের মধ্যে শিপিং পণ্য বেশি। দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত ছোট থেকে বড় সকল পণ্য অ্যামাজনে পাওয়া যায়। সে সব পণ্যের বিক্রির জন্য অ্যাফিলিয়েশন করা যায়।
সাইটের লিংক: affiliate-program.amazon.com
ভালভাবে কাজ না জেনে অ্যাফিলিয়েশন এর জন্য অ্যামাজনে অ্যাকাউন্ট না খোলাই ভালো । কারণ ৯০ দিনের মধ্যে প্রোডাক্ট বিক্রি করতে না পারলে অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ড হতে পারে । অ্যাফিলিয়েশন করার জন্য নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে, সেই ওয়েবসাইটকে অনলাইনে প্রচার করতে হয়।

amazon
অ্যামাজনে সফল হওয়ার ৩টি টিপস:
- ওয়েবসাইটকে গুগলের সার্চের ১ম অবস্থানে আনার প্রক্রিয়া (এসইও) জানা থাকতে হবে।
- ব্লগিং করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।
- ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ভাল দক্ষতা থাকতে হবে।
অ্যাফিলিয়েশন হচ্ছে অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় মাধ্যম। তবে সঠিক দক্ষতা অর্জন ছাড়া কাজ করার সুযোগ নাই।

আরও অনেক অনেক ধরনের মার্কেটপ্লেস রয়েছে। যেমন কিছু মার্কেটপ্লেস রয়েছে যেখানে টি-শার্ট, মগ থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য গিফট পণ্যের ডিজাইন করে সেগুলোকে প্রচার করার মাধ্যমে বিক্রি করে গ্রাফিকডিজাইনাররা ভাল আয় করতে পারে। সেরকম কয়েকটি ওয়েবসাইটের লিংক হচ্ছে: teespring.com, zazzle.com। আবার কিছু মার্কেটপ্লেস রয়েছে, যেখানে ওয়েবসাইট বিক্রি করা যায়। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে আয় হয় (অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয়, অ্যাফিলিয়েশনের মাধ্যমে আয় কিংবা অন্য যেকোনভাবে আয় হয়) এমন সাইটগুলোকেই শুধুমাত্র বিক্রি করা যাবে। যেই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেশি আয় হয়, সেই ওয়েবসাইট বেশি বিক্রি হতে পারে। এরকম সাইটগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হচ্ছে: flippa.com, empireflippers.com
এ পর্বে বিখ্যাত কিছু মার্কেটপ্লেসের বিষয়ে আলোচনা করলাম। পরে প্রতিটা মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলাদা আলাদা পর্ব করে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

চাকুরি নাকি ফ্রিল্যান্সিং

সকল কাজ শিখে যখন কাজ করার জন্য প্রস্তুত, তখন ক্যারিয়ারের পথ দুটি : চাকুরি  অথবা ফ্রিল্যান্সিং। এ দুই ক্যারিয়ারের কোনটিকে আপনি বাছাই করবেন, সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো আজকের পর্বে।

এর আগের পর্বগুলো যারা মিস করেছেন, তাদের জন্য আগের পর্বগুলোর লিংক দিচ্ছি।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

৩য় পর্ব:  ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

outsourcing-1

১) ইচ্ছামত ঘুরি, ইচ্ছামত ঘুমাই:
চাকুরি মানেই সকাল ৯টা-৫টা পযন্ত অফিস করা। ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়ার কারনে নির্দিষ্ট সময়ের ভিতরে অফিসে প্রবেশ করতে না পারা মানেই বসের ঝাড়ির অপেক্ষা, সেই সাথে মাসের বেতন থেকে নির্দিষ্ট একটা অংশ হিসেব করে কেটে নেওয়া হবে। অফিসে প্রবেশের এ দেরিটা যানজট কিংবা অন্য কোন কারনেও হতে পারে।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার: ফ্রিল্যান্সার হলে ইচ্ছামত সময়ে ঘুম, ইচ্ছামত সময়ে ঘুম থেকে উঠলেও কারও কাছে জবাবদিহী করতে হবেনা। শুধুমাত্র সময় অনুযায়ি বায়ারের কাজ জমা দেওয়াটাই আসল কাজ। সেটি দিনে করা হচ্ছে নাকি রাতে, সেটি কারও জন্যই টেনশনের বিষয় নয়।

 ২) হতে চাই নিজের বস:
চাকুরি মানেই যেকোন কাজের ভুল কিংবা যেকোন অপরাধের জন্য বসের রুমে দুরু দুরু বুকে দাড়ানো, পরে এ অপরাধের জন্য বসের মুখ থেকে অপমানজনক বোকাঝোকা শোনা। যেকোন চাকুরিজীবিদের জন্য এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবেলা করা খুবই সাধারণ একটি বিষয়। একটা নির্দিষ্ট বয়স পযন্ত এ বিষয়টি মেনে নেওয়া গেলেও চাকুরি করার বয়সে এসে এধরনের অপমানগুলো সহ্য করা অনেক সময়ই মেনে নিতে অনেকের কষ্ট হয়। কিন্তু অন্য কোন উপায় না থাকার কারনে বাধ্য হয়ে অনেক সময় সবই মেনে নিতে হচ্ছে, শুধুমাত্র সুযোগের অপেক্ষা।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  ফ্রিল্যান্সার মানেই হচ্ছে নিজেই বস। কোন বসের বকাঝোকা খাওয়ার ভয় এ জগতে নাই। পকেট খালি থাকলে কাজ করব, না প্রয়োজন হলে নতুন করে কোন কাজে যুক্ত হবোনা। কাজ না করলে কারও কোন বাধা নাই।

৩) জগতটা ঘুরে দেখাটাই নেশা:
 চাকুরিজীবিদের ছুটির দিন এক দিন কিংবা সর্বোচ্চ দুদিন। প্রতিদিন সকাল ৯-৫টা পযন্ত অফিস করার কারনে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নিজের ব্যক্তিগত কিংবা পরিবারের বিভিন্ন কাজের চাপ এসে পড়ে। সেজন্য ভ্রমণ পিপাসুদের ভ্রমনের নেশাকে ভুলে যেতে হয়। মুক্ত পাখির মত বিশ্বব্যাপী ছুটে বেড়ানোর স্বপ্ন বাদ দিয়ে চাকুরির যান্ত্রিক জীবনটাকেই বেছে নিতে হয়।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার: কোন জায়গাতে বসে বায়ারের কাজ করছেন এবং জমা দিচ্ছেন, সেটি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নয়। আর এটাই হচ্ছেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের আসল মজা। ভ্রমনে বের হয়ে সমুদ্রের পাশে বসে কিংবা পাহাড়ের প্রাকৃতিক পরিবেশে বসেও বায়ারের কাজ সম্পন্ন করা যায়। ঘুরাঘুরি এবং কাজ দুটি সমান তালে করার সুযোগ রয়েছে ফ্রিল্যান্সারদের।

৪) দরকার বড় অংকের মাসিক আয়:
 চাকুরিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বেতন হতে পারে ৮,০০০টাকা কিংবা কারো আরো বেশি হলে হয়ত ৫০,০০০টাকা হতে ১লাখ টাকা হতে পারে বেতন। কম টাকা বেতনের কারনে নিজের অনেক স্বপ্নকে মনের ভিতরেই কবর দিয়ে দিতে হয়। আবার এ টাকাতেই অনেকে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন হয়ত। কারন এর চাইতে বড় স্বপ্ন এখনও দেখতে পারছেননা।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  এদেশের প্রচুর ফ্রিল্যান্সার রয়েছে যারা স্টুডেন্ট অবস্থাতেই মাসে লাখ টাকার উপরে অনলাইন হতে আয় করছে। বাংলাদেশের একজন গ্রাজুয়েটের যেখানে চাকুরিতে মাসিক বেতন হয় ৮০০০টাকা -২০,০০০টাকা। অন্যদিকে অনেক ফ্রিল্যান্সার দেখা যায়, যাদের এটা মাত্র ১ সপ্তাহের আয়, অথচ সে ফ্রিল্যান্সার হয়ত এখন গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেনি।

outsource

৫) চাকুরির কারনে পরিবারকে মিস:
পরিবারকে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য চাকুরি শুরু করলেও, এ চাকুরি পরিবারের লোকদের প্রাপ্য স্নেহ, ভালবাসার নিশ্চয়তা দিতে পারেনা। সারাদিন অফিসের ব্যস্ততার জন্য অনেককেই দেখা যায়, পরিবারের লোকদেরকে সময় দিতে পারেননা। সন্তান, বউ কিংবা স্নেহের ছোট ভাইবোনরা আদর হতে বঞ্চিত হয়। সকাল ৯টা হতে অফিস শুরু করে যদি বাসাতে পৌছে রাত ১০টার পর, তাহলে কিভাবে পরিবারের লোকজন পাশে পাবে।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  পরিবারের সবারই স্বপ্ন থাকে প্রতিবেলাতে সবাইকে সাথে নিয়ে এক টেবিলে বসে খাবার খাওয়ার। চাকুরিজীবিরা পরিবারের মানুষদের এ দাবিটা মিটাতে না পারলেও ফ্রিল্যান্সারদের পক্ষে সম্ভব। কারণ ফ্রিল্যান্সারদের কোন অফিসে গিয়ে কাজ করার প্রয়োজন হয় না, কোন নির্দিষ্ট ছকের মধ্যে বন্দি থাকতে হয়না। চাইলে যখন ইচ্ছা পরিবারের সবাইকে মিলে সিনেমা দেখে আসতে পারে কিংবা বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতেও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বাধা নাই।

৬) মনতো চায় প্রতিষ্ঠানের মালিক হব:
  হয়ত এমন কাউকে পাওয়া যাবেনা, যারা চাকুরি করতে গিয়ে স্বপ্ন দেখেনা যে, সে নিজেই একদিন বস হয়ে নিজের একটি অফিস খুলে বসবে। এ ইচ্ছাটা কম বেশি সবারই মনে রয়েছে। মন চায়, অন্যের অফিসে চাকুরি করবোনা, আমার নিজের অফিসে চাকুরি করবে অনেকজন, শুনবে সবাই আমার নির্দেশ,আমাকে কারও নির্দেশ শুনতে হবেনা। কিন্তু এরকম হওয়াতো সম্ভব না। চাকুরি করে যে টাকা পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে নিজের চলতেই কষ্ট হয়, অফিসের স্বপ্ন দেখব কিভাবে? অফিসের জন্য আয় করবোই কিভাবে?

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  একজন ফ্রিল্যান্সার জানে অনলাইন হতে কিভাবে কাজ যোগাড় করা যায়। ১-২ বছর যাওয়ার পর অনেক ফ্রিল্যান্সারদেরই কাজের চাপ বেড়ে যায়। তখন সেই কাজ করানোর জন্যই বাধ্য হয়ে  কাজ করার জন্য অনেকজন লোক খুজে নিতে হয়। এবং তখন পূরণ হয় বহুদিনের বস হওয়ার স্বপ্নটি।

৭) যানজট কমিয়ে দিচ্ছে কাজের সময়:
প্রতিদিন অফিসে যেতে এবং আসতে যানজটের জন্য কমপক্ষে ৫-৬ ঘন্টা সময় ব্যয় হয়। কিছুই করার নাই, ঢাকা শহরে থাকতে হলে এবং অফিসে গিয়ে চাকুরি করতে হলে এটা মেনে নিতেই হবে। যানজটে নাকাল আবার তার উপর দেরি হলে বাড়তি বসের ঝাড়ি এবং বেতন কাটা, এগুলো বাড়তি পাওনা। কিন্তু এদেশে অফিস করতে গেলে যে যানজটের কারনে কখন অফিসে ঢুকতে পারবেন, নির্দিষ্ট করে বলা যায়না। এ বিষয়টা সবাই বুঝলেও অফিস বসরা বুঝতে চায়না।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  যানজটের ঝামেলাতে বিরক্ত হয়ে অনেকেই সমাধান হিসেবে ফ্রিল্যান্সার পেশাটাকেই এখন পছন্দ করছে। প্রতিদিন রুটিন মেনে ঘর থেকে বাইরে গিয়ে অফিস করার ঝামেলা মুক্ত থাকা যাচ্ছে। নিজের ঘরটাই তখন অফিস, আবার সেই অফিসে নিজেই বস।

৮) ঘর থেকে বের হলেই অনিশ্চিত জীবন:
 বর্তমানে রাস্তাতে বের হলেই পরিবারের লোকজন টেনশনে থাকেন ঘরে আবার ফিরতে পারবেতো। প্রতিদিন সকালে অফিসের জন্য যখন বের হয়, তখন থেকেই শুরু হয় এ টেনশন, অফিস থেকে বাসাতে ফিরার আগ পযন্ত এ টেনশন কাজ করে। রোড এক্সিডেন্ট থেকে শুরু করে অন্যান্য অনেক ধরনের অ্যাক্সিডেন্টের ভয় নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হয় চাকুরিজীবিদের।

যখন আপনি ফ্রিল্যান্সার:  ফ্রিল্যান্সারদের জন্য রাস্তা ঘাটের ঝামেলা মুক্ত জীবন। ঘরে বসেই যদি চাকুরিজীবিদের চাইতে ভাল আয় করা যায়, তাহলে কেন রাস্তাঘাটে বের হওয়ার ঝুকি নিতে হবে? নিজের অন্য অনেক প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু সেটাতো আর প্রতিদিন রুটিন মাফিক টেনশন না।

আরো কারনে চাকুরিজীবি না হয়ে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যেতে পারে।

Outsourcing31

তবে চাকুরিজীবি হওয়ার পক্ষেও অনেক যুক্তি রয়েছে।
-   চাকুরি করতে গেলে অফিসের অন্যদের থেকে শিখা যায় অনেক কিছু। ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষেত্রে নিজে নিজে কিংবা নতুন কিছু শিখতে হলে সম্পূর্ণভাবে অনলাইনের উপর নির্ভর করতে হয়।

-   চাকুরিজীবিদের জন্য প্রতি মাসের নির্দিষ্ট একটা বেতনের নিশ্চয়তা থাকলেও অনেক সময় নতুন ফ্রিল্যান্সারদেরক্ষেত্রে সেটা থাকেনা।

-   চাকুরিজীবিদের জীবনে যে শৃংখলা থাকে, সময়ানুবর্তিতার চর্চা থাকে ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সেটি বেশিরভাগক্ষেত্রেই দেখা যায়না।

-   এখনও আমাদের সমাজে ফ্রিল্যান্সারদেরকে সেইভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়না, যেমন দেয়া হয় চাকুরিজীবিদের। সেজন্য বিয়ে সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলাতে পড়তে হয় ফ্রিল্যান্সারদের।

-   অনেক ফ্রিল্যান্সাররা ঘরকুনো বেশি হওয়ার কারনে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চাকুরিজীবিদের ক্ষেত্রে সেটি হওয়ার সম্ভবনা কম।

চাকুরিজীবি হবেন নাকি ফ্রিল্যান্সার হবেন সেটি আপনার নিজের সিদ্ধান্ত। সবক্ষেত্রে ভাল খারাপ দুই দিকই রয়েছে। তবে এখনও এদেশে ফ্রিল্যান্সিংটাকে কেউ পেশা হিসেবে নিতে ভয় পায়, বেশিরভাগক্ষেত্রে সামাজিক কারনে। তবে অবশ্যই খুব শীঘ্রই এর পরিবর্তন আসবে। তখন হয়ত দেখা যাবে, লোকাল অফিসগুলো ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই তাদের অফিসের লোক নিয়োগ দিবে। অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবেনা, ঘরে বসেই অফিস করার সুযোগ থাকেনা। অনলাইনে যোগাযোগের এ যুগে সবকিছুতেই পরিবর্তন আসবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে করনীয়

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে নিজের মধ্যে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেই যোগ্যতাগুলো নিয়েই আজকের এ পর্বটি।

এর আগে এ ধারাবাহিকটির আরো দুটি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।

১ম পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা

২য় পর্ব: ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো

succes





ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে নিচের যোগ্যতাগুলো খুব জরুরী:
-       টাকাকে নয় কাজকে ভালবাসতে হবে।

-       ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম হিসেবে না ফুলটাইম ক্যারিয়ার ভাবা শুরু করতে হবে।

-       কমিউনিকেশন দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা অনেক বাড়িয়ে দেয়।

-       ইংরেজিতে যত ভাল হবেন, তত বেশি সফল হবেন।

-       যত বেশি কিছুতে যত বেশি দক্ষ হবেন, সফল হতে পারবেন তত বেশি।

-       সবসময় নিজের আরো বেশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নেশা থাকতে হবে।

-       যে যত বেশি গুগলের উপর নির্ভরশীল, তার সফলতার সম্ভাবনা তত বেশি।

-       ইন্টারনেটের উপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং সফল হবেন।

-       প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কিছুতেই সফল হওয়া যায়না।

-       ধৈয্য শক্তি এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

টাকাকে নয় কাজকে ভালবাসতে হবে:
ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফলতার জন্য টাকার লোভ ত্যাগ করে কাজে দক্ষতা অর্জনের দিকে বেশি নজর দিতে হবে।  দক্ষলোকদের সমাদর সবজায়গার মতই ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে। সেজন্য সবার প্রথমে বিভিন্ন রিসোর্স থেকে কাজ শিখে সেগুলোর বাস্তবভিত্তিক কাজ করে দক্ষতা অর্জন করলেই অনলাইনে কাজের রেট এবং চাহিদা দুটি বৃদ্ধি পাবে। এরকম চাহিদাপূর্ণ অবস্থানে আসার জন্য অবশ্যই কিছুটা সময় দিতে হবে। মনে রাখবেন, অদক্ষ ব্যক্তিদের টাকার পিছনে দৌড়াতে হয়। কিন্তু দক্ষ ব্যক্তিদের পিছনে টাকা দৌড়ায়।

ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম হিসেবে না ফুলটাইম ক্যারিয়ার ভাবা শুরু করতে হবে:
সময় এসেছে ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে পার্টটাইম চাকুরি না ভেবে ফুলটাইম হিসেবে নিতে হবে। তাহলে প্রত্যেকে কাজের ব্যাপারে আরো বেশি সচেতন হবে এবং দক্ষ হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী হবে। তখন বিদেশী বায়াররা এদেশের ফ্রিল্যান্সারদেরকে কাজ দিতে আরো বেশি স্বস্তি পাবে।



ফ্রিল্যান্সিংকে পার্টটাইম ভাবার কারনে মূলত আমরা ৩ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি:

১) দিনের সময়ের সর্বোচ্চ সময়টি ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারছিনা। সেজন্য দক্ষ যেমন হতে পারছিনা, তেমনি কাজও বেশি করতে পারছিনা।

২) যখন ফ্রিল্যান্সিংকে ফুলটাইম হিসেবে ভাবা শুরু হবে তখন আরো বেশি মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রা আরো বেশি দেশে ঢুকবে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে বড় সুফল নিয়ে আসবে।

৩) ফুলটাইম কাজ ভাবা শুরু করলে ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অনলাইন আয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা, ধীরে ধীরে এটি তখন সম্মানজনক ক্যারিয়ার হিসেবে বিবেচিত হওয়া শুরু হবে। তখন প্রত্যেকের মধ্যে ভাল করার ব্যাপারে উৎসাহ আরো বাড়বে।

freelance

যোগাযোগের দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা অনেক বাড়িয়ে দেয়:
এক জরিপে দেখা গেছে, যাদের যোগাযোগ দক্ষতা বেশি তারা অন্য সব জায়গার মত ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও সফল সবচাইতে বেশি হয়ে থাকে। যোগাযোগ দক্ষতা বলতে বুঝায়: বায়ারের বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা , বায়ারকে নিজের বক্তব্য সঠিকভাবে বুঝাতে পারা এবং সেই সাথে বায়ারকে কনভেন্স করতে পারাটাই হচ্ছে, যোগাযোগের মৌলিক দক্ষতা।

যোগাযোগের এ মৌলিক দক্ষতা থাকলে বায়ার কাজ দিয়ে স্বস্তি পায়। আর সেজন্য একবার কাজ করলে পরের কাজটির ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব চেষ্টা করেন, একই ফ্রিল্যান্সারকেই কাজটি দেওয়ার জন্য। কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সাথে যোগাযোগের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে খুব দ্রুত সফল হওয়া যাবে।



ইংরেজিতে যত ভাল হবেন, তত বেশি সফল হবেন:
ইংরেজি হচ্ছে যেকোন ধরনের বায়ারের সাথে যোগাযোগের মূল ভাষা। যে যত ভাল ইংরেজি পারে, সে তত বেশি ভালভাবে বায়ারের সাথে সম্পর্কস্থাপন করতে পারে। কারণ বায়ারের নির্দেশনা বুঝতে তার অনেক বেশি সহজ হয়। বায়ারও যাকে দিয়ে কাজ করাবে, তার কথা জড়তা ছাড়া বুঝতে পারে। এ ধরনের ফ্রিল্যান্সারদের সাথে বায়ার ‍স্বাচ্ছন্দে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে দেখে দীর্ঘদিনের কাজের সম্পর্ক বজায় রাখে। বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, শুধুমাত্র ভাষাগত সমস্যার কারনে কাজ দিয়ে সন্তুষ্ট করার পরও বায়ার এ ফ্রিল্যান্সারের কাছে আর নতুন কোন কাজ নিয়ে ফিরে আসেনা। একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য তাই নিজেকে ইংরেজিতে ধীরে ধীরে দক্ষ করে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।



যত বেশি কিছুতে যত বেশি দক্ষ হবেন, সফল হতে পারবেন তত বেশি:
যদি একজন ফ্রিল্যান্সারের কাছে একটি কাজের বাইরে অন্যান্য আরও কাজের সাপোর্টও পাওয়া যায়, তাহলে তার সাথে বায়ারের দীর্ঘদিনের জন্য সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য সব কাজেই দক্ষতা তৈরি করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বায়ারদের কাছে নিজের চাহিদা বৃদ্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে মাথাতে রাখতে হবে, সব কাজে সমান দক্ষতা অর্জন করাটা অনেক বেশি কষ্টকর। যেটা করতে হবে, কোনটি একটিতে ভালো দক্ষ হতে হবে, বাকিগুলোতে মোটামুটি দক্ষ হলেই চলবে।

সবসময় নিজের আরো বেশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নেশা থাকতে হবে:
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বহুদিন পযন্ত  বায়ারদের কাছে নিজের চাহিদা ধরে রাখার জন্য সবসময় নতুন কিছু শিখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ধরি, কেউ যদি এসইওর কাজের মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে থাকেন, তাহলে প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় এসইও সম্পর্কিত লিখা পাওয়া যায়, এরকম ব্লগগুলোর পোস্ট নিয়মিত পড়া উচিত। নতুন যত আপডেট আসছে, সব কিছু জেনে সেগুলোতে নিজেকে দক্ষ করতে হবে।



যে যত বেশি গুগলের উপর নির্ভরশীল, তার সফলতার সম্ভাবনা তত বেশি:
কোন সমস্যাতে পড়লে সে বিষয়ে জানার জন্য কোন ব্যক্তির কাছে প্রশ্ন না করে, সে বিষয়ে গুগলকে প্রশ্ন করা উচিত। গুগলের উপর এ নির্ভরশীলতা জানার পরিধি অনেক বাড়িয়ে দেয়। গুগলে খোজ করলে অনেকগুলো উত্তর পাওয়া যাবে, যা চিন্তা শক্তিকে বাড়াবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতার জন্য শুরু থেকেই গুগলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে।

boln

ইন্টারনেটের উপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং সফল হবেন:
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করলেই কাজ পেয়ে যায়না। এরকম সফলতার জন্য শুরুর দিকে কষ্ট অনেক বেশি করতে হয়। আর এজন্য ইন্টারনেটে দিনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করা উচিত। শুধু ফেসবুকে সময় ব্যয় না করে, বিভিন্ন ব্লগ, ফোরাম, ভিডিও কিংবা অনলাইনের অন্য জায়গাগুলো প্রতিদিনের বড় একটা সময় ব্যয় করার অভ্যাস নিজের মধ্যে গড়ে তুলতে হবে। এসব জায়গাগুলোতে সারাবিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় ফ্রিল্যান্সাররা তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করে। এগুলো সত্যিকারেরভাবে অনেক কিছু নতুন অনেক কিছু শিখতে এবং সবকিছুর বিষয়ে আরো অ্যাডভান্স হতে সহযোগিতা করে।

প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কিছুতেই সফল হওয়া যায়না:
যে কোন কাজের সফলতার জন্য যেমন সবার প্রথমে দরকার ইচ্ছাশক্তি, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও বিষয়টা ব্যতিক্রম না। প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি থাকলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফল হওয়ার ব্যাপারে যত প্রস্তুতিমূলক পরিশ্রম করা দরকার, সব কিছু করতে আগ্রহ থাকবে। সুতরাং কারও কথা শুনে হালকাভাবে লক্ষ্য নিয়ে নামলে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাটা ৯৫%। কিন্তু যদি নিজের তীব্র ইচ্ছা থাকে এবং একাগ্রতা থাকে, তাহলেই ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হবেন।

ধৈয্য শক্তি এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে ধৈয্য শক্তি বাড়িয়ে নেওয়া উচিত। কাজ শিখতেও ধৈয্য নিয়ে শিখতে হবে। পরে শুরুতে কাজ পাওয়ার জন্য বহুদিন ধৈয্য সহকারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। এমন হতে পারে, কাজ শিখার পর ১ম কাজের অর্ডার পেতে ১বছরও লেগে যেতে পারে। কিন্তু তারপরও ধৈয্য হারালে চলবেনা। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, নিজেকে দক্ষ করতে হবে, বায়ারের কাছে কাজ চাওয়ার ধরনে পরিবর্তন এনে দেখা যেতে পারে। হতাশ না হয়ে কাজ পাওয়ার ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হলে উপরের বিষয়গুলো নিজের ভিতরে নিয়ে আসার চেষ্টা শুরু করে দিতে হবে। আন্তর্জাতিকবাজারে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে জিততে হলে নিজের মধ্যে বিশেষ কিছু থাকতেই হবে। কাজের দক্ষতার পাশাপাশি অধ্যাবসায়, ধৈয্য এবং নতুন কিছু শিখার নেশা সফলদের কাতারে পৌছিয়ে দিবে।

ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণাগুলো নিয়ে আজকের পর্বটি সাজিয়েছি। এ ভুল ধারণাগুলোর বিষয়ে সবার ধারণা পরিস্কার করলে আরো অনেক ফ্রিল্যান্সার তৈরি হবে আমাদের দেশে।



১ম পর্বের লিংক: http://genesisblogs.com/freelancing-2/18379

ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রচলিত কয়েকটি ভুল ধারণা:
blogging

-       সবজায়গাতে ব্যর্থ, শেষ গন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং।

-       ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্ক, ইল্যান্স ইত্যাদি জায়গাতে কাজ করা।

-       ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নাই।

-       ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়।

-       ফ্রিল্যান্সিং চাকুরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকুরি হতে পারে, ফুলটাইম না।

-       চাকুরিতে সবসময় টাকা আসার নিশ্চয়তা থাকলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনিশ্চিত।

-       বিদেশীদের মত ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবেনা।

-       পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে।

-       ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য ৭দিন কিংবা ১মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট।

-       ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য নিজের নামে পেপাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

-       ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হবে।

-       সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা যায়না।



১) সব জায়গাতে ব্যর্থ, শেষ গন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং:
এ ধারণাটি সমাজে অনেক বেশি প্রচলিত। পড়ালেখা কিংবা কোন কিছুতেই কিছু করতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কোন কিছু করার ব্যাপারে খুবই অলস, এ অলসতার কারনেই নিজের ক্যারিয়ার সাজাতে পারছেননা। এরকম মানুষজনের ভাবনাতেও থাকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়ার চিন্তা। অনেক সময় এ চিন্তাটা আরো ভয়াবহ হয়। তারা ভেবে থাকে, কোন কিছুই আমাকে দিয়ে হবেনা। ফ্রিল্যান্সিংটাতো আছেই, সেটা দিয়েই অনেক অনেক টাকা আয় করব।

আসল সত্য: ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অযোগ্যদের জায়গা নাই। যতবেশি যোগ্যতা অর্জন করবেন, অনলাইনে আপনার আয় তত বৃদ্ধি পাবে। যোগ্যতা ছাড়া হয়ত পাঁচ-দশ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। কিন্তু সেটি অবশ্যই সাময়িক আয়। ফ্রিল্যান্সিং যখন করবেন, স্বপ্নটা পাঁচ-দশ হাজার টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাটা বোকামী।

makemoney

২) ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্কে (পুরাতন নাম: ওডেস্ক) কাজ করা:
আমাদের দেশের একটা ধারণা প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে, অনলাইনে আয় করতে হলে আপওয়ার্কেই বিড করে কাজ যোগাড় করতে হবে। আর যখন কাজ না পায়, তখন হতাশ হয়ে কাজ ছেড়ে দেয়। অনেকক্ষেত্রে আপওয়ার্কে কাজ পেতে ব্যর্থ হয়ে কাজ পাওয়ার জন্য স্পামিং করছে, কাজের রেট কমিয়ে বিড করছে। যার কারনে আমাদের দেশের ব্যাপারে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে একটা বাজে অবস্থান তৈরি হচ্ছে।

আসল সত্য: পৃথিবীতে যত কাজ আউটসোর্স হচ্ছে, তার মধ্যে মাত্র ৭% কাজ মার্কেটপ্লেসগুলোতে পাওয়া যায়। মার্কেটপ্লেস ছাড়াও আর কিভাবে কাজ পাওয়া যায়, সেটি জানার জন্য সকল পর্বে চোখ রাখুন। সে বিষয়ে এ ধারাবাহিকের কোন একটা পর্বে আলোচনা করা হবে।

৩) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নাই:
ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অনেকের ভাবনাতে থাকে, পত্রিকাতে অল্প কিছু পড়লাম, কিংবা সেমিনারে গিয়ে কিছু বিষয় জানা হয়েছে, এখন চাইলেই শুরু করে দেওয়া যাবে ফ্রিল্যান্সিং। ১মাস- দুই মাসের প্রস্তুতিতেই অনেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা আয় করার স্বপ্ন দেখে। আবার প্রস্তুতির জন্য প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা সময় দেওয়াটোকেও গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেননা। কম পরিশ্রমেই অনলাইন সেক্টরের স্বপ্নটা একসময় খুব বড় হতাশা সৃষ্টি করে এবং সেই সাথে অনলাইন জগত সম্পর্কে বাজে একটি ধারণা তার মনে তৈরি হয়।

 আসল সত্য: ফ্রিল্যান্সিং জায়গাটা শুধুমাত্র যোগ্যদের জন্য। কারণ কোন ক্রেতা তার কাজ করানোর জন্য সারা বিশ্বের অনেকজন ফ্রিল্যান্সার মধ্য থেকে সেরা কাউকে বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সুতরাং যাদের যোগ্যতা কম তাদের তখন কাজ না পাওয়ার সম্ভাবনাটা থাকে। শুরুতে প্রচুর সময় এবং পরিশ্রম করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারপর ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজের চেষ্টা করা উচিত।

 ৪) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়:
যারা অনলাইনে আয় করছেন তাদের মত আমার যোগ্যতা নাই। আমি সে জায়গাতে আমার পক্ষে পৌছানো সম্ভবনা, এধারণা থেকে অনেকেই পিছিয়ে পড়েন।

আসল সত্য: মাথাতে রাখা উচিত, যারা এমুহূর্তে সফলভাবে অনলাইনে আয় করছেন, তারা একসময় খুবই সাধারণ ছিল। পরিশ্রম এবং প্রশিক্ষণ তাদেরকে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছে। যে কেউ যদি কাজ শিখে নেয় এবং প্রচুর পরিশ্রম করে, তাহলে যে কেউ অনলাইনে সফল হতে পারে।

৫) ফ্রিল্যান্সিং পার্টটাইম চাকুরি, ফুলটাইম না:
এখনও আমাদের দেশে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টা নতুন দেখে বেশিরভাগই ফ্রিল্যান্সিংটাকে চাকুরির বিকল্প ভাবতে পারছেনা। চাকুরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম হিসেবেই ফ্রিল্যান্সিংকে এখনও সবাই ভাবছে। আর সেজন্য ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে যে পরিমান আয় করা সম্ভব, সেটি বাস্তব হচ্ছেনা।

আসল সত্য:  ফ্রিল্যান্সিং শুধুমাত্র অতিরিক্ত টাকা আয়ের মাধ্যম না। এটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া সম্ভব। কারণ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে মূলত উন্নত দেশের কোন কোম্পানীর হয়ে কাজ করা হচ্ছে। অনেকেই আবার এখানে বসে অন্য কোম্পানীর নিয়মিত কর্মচারী হিসেবে এদেশে বসে চাকুরিও করছে।

 ৬) চাকুরিতে মাস শেষে নিশ্চিত টাকা, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে অনিশ্চিত:
ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে চাকুরির বেতনের ৫-১০গুণ আয় হওয়ার পরও এদেশের পরিবারগুলো থেকে ফ্রিল্যান্সিং করতে বাধা দেওয়া হয়। কারণ চাকুরির ক্ষেত্রে কম টাকা হলেও মাস শেষে নিশ্চিতভাবে হাতে টাকা আসবে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে সাময়িক আয়, একসময় সে আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এ ধারণাটি এখনও অনেকের মধ্যেই আছে। আবার সব মাসেই আয় হবে কিনা সেটি নিয়েও সন্দেহটা রয়েই যায়।

আসল সত্য:  ধরি, কেউ একজন মার্কেটিংয়ের কাজ করে অনলাইনে আয় করে। তাহলে তার একসময় কোন কাজ থাকবেনা, সেটার মানে দাড়ায়, পৃথিবীতে আর কোন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন নাই। সেটি যদি হয়ে থাকে, তাহলেতো দেশের ভিতরেও যারা মার্কেটিংয়ের চাকুরি করে, তারাও বেকার হয়ে পড়বে। কোন সেক্টর হিসেব করলে লোকাল পযায়ে যদি চাকুরির সুযোগ থাকে ১০০ প্রতিষ্ঠানে, তাহলে অনলাইনে চাকুরির সুযোগটা থাকবে ১লাখ প্রতিষ্ঠানে। কারণ অনলাইনে সারাবিশ্বের সব প্রতিষ্ঠানেই আপনার চাকুরি করার সুযোগ থাকছে

৭) বিদেশীদের মত ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবেনা:
অনেকে কাজের ক্ষেত্রে ভাল দক্ষতা থাকার পরও ইংরেজিতে দুর্বল হওয়ার কারনে অনলাইনে আয়ের চিন্তা সম্পূর্ণরুপে মাথা থেকে বাদ দিয়ে দেয়।

আসল সত্য: অনলাইনে কাজের ক্ষেত্রে দক্ষতাটাকে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দেয় বায়াররা। তবে  বায়ার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার সময় যদি দেখে ফ্রিল্যান্সারটি ভাষার দুর্বলতার কারনে কাজ সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারছে না, কিংবা ফ্রিল্যান্সার বায়ারকে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার ভাষা বুঝতে বায়ারের জন্য কষ্টসাধ্য হয়, তখন বায়ার কিছুটা বিরক্তবোধ করে। সেক্ষেত্রে কাজে দক্ষ থাকলে অনেক সময় বায়ার তার ভাষার দুর্বলতাকে কনসিডার করে। তবে এক্ষেত্রে যে ইংরেজিতে দক্ষ এমন কাউকে সংগী করে একসাথে ফ্রিল্যান্সিং করা যেতে পারে।

৮) পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে:
ফ্রিল্যান্সিংয়ের জোয়ারের কারনে অনেকের ধারণা অ্যাকাডেমিকভাবে শিক্ষিত না হয়েও শুধুমাত্র বিভিন্ন আইটি বিষয়ক বিষয়ে ট্রেনিং নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে। আর সেজন্য পড়ালেখাকে সম্পন্ন করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

আসল সত্য: সবকিছুর জন্যই পড়ালেখার দরকার আছে। শিক্ষিত ব্যক্তি জ্ঞানের পরিধি একজন অশিক্ষিত ব্যক্তির চাইতে অবশ্যই অনেক বেশি উন্নত হবে। যদিও শুধুমাত্র চাকুরি করার জন্য পড়ালেখা করতে হয়, এরকম একটি ভুল ধারণা আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে।

make-money-online

৯) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য ৭দিন কিংবা ১মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট:
অনেকেই কম্পিউটার কিনেই চিন্তা শুরু করে কিছুদিনের মধ্যেই অনলাইনে আয় শুরু করতে পারবে। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার কিংবা পত্রপত্রিকা এবং ব্লগ থেকে এ সম্পর্ক লেখা পড়েই অতি স্বল্প সময়ে অনলাইনে আয় শুরু করব।

আসল সত্য: ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য যে বিষয়টিকে আপনি বেছি নিয়েছেন, সেটিতে খুব ভালভাবে দক্ষ হওয়া ছাড়া কাজ করে প্রচুর পরিমানে আয় করার সম্ভাবনাটা কম থাকে। আর খুব ভালভাবে দক্ষ হওয়ার জন্য অবশ্যই ট্রেনিং নেওয়ার পাশাপাশি সেটিতে প্রচুর পরিমানে প্রাকটিস করার জন্য সময় দেওয়া দরকার। অভিজ্ঞরা বলেন, মাসে ২০হাজার টাকার চাকুরির জন্য যদি ২০ বছরের মত সময় স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে ব্যয় করতে হয়, তাহলে অনলাইনে ৭০হাজার -১লাখ টাকা আয় করার জন্যতো কমপক্ষে ৩মাস -১বছর সময় ব্যয় করার মত ধৈয্য থাকাটা উচিত।

১০) ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য নিজের  পেপাল অ্যাকাউন্ট লাগবে:
অনেকে ফ্র্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখার শুরুতেই টেনশনে পড়ে যায়, পেপালতো নাই তার। অনলাইনে আয় শুরু করলে কিভাবে সে টাকা বাংলাদেশে নিয়ে আসবে। খরচ করে কাজ শিখব, পরে কষ্ট করে কাজ করে আয় করার পর যদি সেই টাকা পেপাল না থাকার কারনে নিজের কাছে আনতে না পারে, তাহলেতো শুরুতেই থেমে যাওয়া উচিত, এরকম ভাবনাও অনেকের মধ্যে কাজ করে।

আসল সত্য: কাজ করার পর ডলার গ্রহণ করতে কেউ এখন পযন্ত ব্যর্থ হয়নি। এমনকি আমাদের দেশের অনেকেই আছে, যারা এখনও এস.এস.সি পাশ করেনি, যাদের এখনও বাংলাদেশের কোন ব্যাংকেই অ্যাকাউন্ট খোলার বয়স হয়নি। তারাও অনলাইনে আয় করে সেই ডলার রিসিভও করতেছে। তবে এটা ঠিক পেপাল সুবিধা না থাকার কারনে ডলার দেশে নিয়ে আসাটা অনেকক্ষেত্রে একটু ঝামেলাপূর্ণ হচ্ছে। তবে ঝামেলাপূর্ণ হলেও কোন না কোন ভাবেই গ্রহণ করা যাচ্ছে।

১১) ট্রেনিং সেন্টারে কোর্স না করলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়না:
অনেকের  আফসোস দেখেছি, তারা  টাকার অভাবে ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হতে পারছেনা দেখে ফ্রিল্যান্সার হতে পারছেনা দেখে আফসোস করে। ধারণা তৈরি হয়ে গেছে ট্রেনিং সেন্টারে না গেলে অনলাইন হতে আয় করা সম্ভবনা।

আসল সত্য: অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে, ইউটিউবে এখন প্রচুর রিসোর্স আছে যা দেখে চাইলে ঘরে বসেই খুব ভালভাবেই সব কিছু শিখে অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। বর্তমানে বাংলাতেই অনেক ভাল রিসোর্স পাওয়া যায়, যা কাজ শুরু করার জন্য যথেষ্ট। তবে এটা সত্য নিজে নিজে রিসোর্স পড়ে শিখতে গেলে পরিশ্রম এবং সময় বেশি লাগে।

১২) সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিং করা যায়না:
অনেক সময় কমার্সের স্টুডেন্ট কিংবা মানবিক বিভাগের স্টুডেন্টরা মনে ধারণা পোষণ করে, তারা অনলাইন হতে আয় সম্ভব না। যেহেতু কাজটি কম্পিউটারে বসে করতে হয়, তাই শুধুমাত্র কম্পিউটার সায়েন্সের স্টুডেন্টরাই কাজটি করতে পারবে, এরকম ভুল ধারণাও সমাজে প্রচলিত আছে।

আসল সত্য: অনলাইনে ক্যারিয়ারের সাথে অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনধরনের সম্পর্ক নাই। মানবিক কিংবা বাণিজ্য কিংবা সায়েন্স যেকোন বিভাগের যে কেউ অনলাইনে কাজের দক্ষতা অর্জন করে সেগুলোর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করে সফল হতে পারে।

লেখাটি ১ম প্রকাশ করেছি যুগান্তরে এবং প্রিয়.কমে।

সর্বপ্রথম প্রতি বৃহস্পতিবার  যুগান্তরে পাবেন এ ধারাবাহিকটি।

পর্ব:১- ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি কি?


অনলাইনের এ যুগে বেকার শব্দটি বড্ড বেশি বেমানান। কারণ অনলাইন সারা বিশ্বকে নিয়ে এসেছে আপনার ঘরের কোণে। এখন ঘরে বসেই সম্ভব হচ্ছে বিদেশে থাকা নিজের কাছের মানুষের সাথে ভিডিও কথোপকথন, যা আজ থেকে মাত্র ৩ বছর আগেও মানুষের কাছে অসম্ভব এবং অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। এখন বিষয়টি গ্রামের স্বল্প শিক্ষিত মানুষদের কাছেও অতি-পরিচিত। যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি বিশাল আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। এ ইন্টারনেট সারা বিশ্বকে ছোট করে নিয়ে আসার পরই চলে এসেছে বিশাল বড় পরিবর্তন। সারা বিশ্বে ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বড় বড় কোম্পানিগুলোও ভাবা শুরু করেছে, তাদের কাজের জন্য সকল স্টাফকে অফিসে নিয়ে এনে বসানোর দরকার নেই। খরচ কমানোর পরিকল্পনাতে তারা সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কাজের জন্য লোক নেওয়া শুরু করল, যারা অফিসে না এসে অন্য দেশে বসে ঘরে বসেই সব কাজ করা সম্ভব। অনলাইন বিষয়টিকে এতই সহজ করে দিল, যেটার জন্য এখন আর প্রয়োজন হচ্ছেনা নিজের দেশ ত্যাগ করে, নিজের পরিচিত পরিবেশ, বন্ধু-আত্মীয়স্বজনকে ত্যাগ করে দূরে চলে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া। ঘরে বসেই মানুষ এখন বড় বড় কোম্পানিতে চাকুরী করছে। দিনে দিনে এ সংখ্যা আরো বাড়ছে, সামনে আরও বাড়বে। কারন অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে এখনও যা যা বাধা আছে, সেগুলোও ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে। অনলাইনে বসে এরকম কাজ করে যারা নিজেদের ক্যারিয়ারকে গড়ে তুলেছেন, তাদেরকেই ফ্রিল্যান্সার বলে। আর এ ধরনের কাজকেই ফ্রিল্যান্সিং বলে।

freelancing job
উপরের কথা থেকে বুঝেছি, ফ্রিল্যান্সিংটা আসলে কি? যদি সত্যি-ভাবেই উপরের অংশ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে থাকে তাহলে হয়ত মানুষের মধ্যে চলে আসা ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে ভুল ধারণাটি দূর হবে।

ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে প্রচলিত কয়েকটি ভুল ধারণা:
- কোথাও কোনভাবে আয় করতে পারছেনা, তাহলে শেষ গন্তব্য ফ্রিল্যান্সিং।
- ফ্রিল্যান্সিং মানেই আপওয়ার্ক, ইল্যান্স ইত্যাদি জায়গাতে কাজ করা।
- ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য খুব বেশি যোগ্যতার দরকার নাই।
- ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অসাধারণ গুণের অধিকারী হতে হয়।
- ফ্রিল্যান্সিং চাকুরি কিংবা পড়ালেখার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকুরী হতে পারে, ফুল টাইম না।
- চাকুরীতে সবসময় টাকা আসার নিশ্চয়তা থাকলেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টা অনিশ্চিত।
- বিদেশীদের মত ইংরেজি না জানলে ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবেনা।
- পড়ালেখা না জেনেও ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে।
- ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য ৭দিন কিংবা ১মাসের প্রস্তুতি যথেষ্ট।
- ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার জন্য নিজের নামে পেপাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
- ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে ট্রেনিং সেন্টারে যেতে হবে।
- সায়েন্সের স্টুডেন্ট না হলে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করা যায়না।
ফ্রিল্যান্সিংকে আরো বেশি জনপ্রিয় করতে হলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা দরকার। পরের পর্বগুলোতে আলোচনা করবো বিষয়টি নিয়ে।
সাধারণত ইন্টারনেট থেকে আয়ের অনেক পথ আছে, আবার প্রতারণার ফাদও আছে। তাই সাবধানতার সঙ্গে বুঝেশুনে আপনাকে পথ চলতে হবে। অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পথ চললে সফল হতে পারবেন। এখন চাকুরি না পেলে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন হয়না। ঘরে বসেই মাসে ১৫হাজার হতে লাখ টাকার বেশিও আয় করা সম্ভব ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে। আমরা ধারাবাহিকভাবে অনলাইন আয়ের বিভিন্ন উপায় নিয়ে এ আর্টিকেলটি লিখতে থাকব। তবে এক ক্লিকে এক ক্লিকে এক কোটি ডলার বা সাইনআপ করেই ৫০হাজার ডলার নিয়ে নিন, এমন কিছু এখানে পাবেননা।১ম পর্বেই বলে নিচ্ছি, যারা রাতারাতি বড়লোক হতে চান, তারা মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা এ ধারাবাহিক লেখাটি পড়ে। মনে রাখবেন, PTC, Add Click, এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন ক্ষণস্থায়ী এবং অনেক সময় এটি প্রতারণার একটা অভিনব পদ্ধতি।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হতে হলে নিচের যোগ্যতাগুলো খুব জরুরী:
freelance

- টাকাকে নয় কাজকে ভালবাসতে হবে।
- ফ্রিল্যান্সিংকে শুধু পার্টটাইম হিসেবে না ফুলটাইম ক্যারিয়ার ভাবা শুরু করতে হবে।
- কমিউনিকেশন দক্ষতা ফ্রিল্যান্সিংয়ের সফলতা অনেক বাড়িয়ে দেয়।
- ইংরেজিতে যত ভাল হবেন, তত বেশি সফল হবেন।
- যত বেশি কিছুতে যত বেশি দক্ষ হবেন, সফল হতে পারবেন তত বেশি।
- সবসময় নিজের আরো বেশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নেশা থাকতে হবে।
- যে যত বেশি গুগলের উপর নির্ভরশীল, তার সফলতার সম্ভাবনা তত বেশি।
- ইন্টারনেটের উপর জীবনকে নির্ভরশীল করতে পারলে ফ্রিল্যান্সিং সফল হবেন।
- প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কিছুতেই সফল হওয়া যায়না।
- ধৈয্য শক্তি এ সেক্টরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জেনে রাখা দরকার, কোন ধরনের যোগ্যতা ছাড়া, কোন কষ্ট ছাড়া আয়গুলোর পরিমান হলেও অনেক কম হবে এবং বেশিদিন স্থায়ী হবেনা। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষলোকদের মূল্য অনেক বেশি হয়। দক্ষলোকদের জন্য অনলাইন হতে মাসে ১-২লাখ টাকা আয় করা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কিংবা আপনার বয়স কোন ধরনের বাধা হয়ে দাড়াবেনা। এদেশে নারী কিংবা প্রতিবন্ধী যাদের জন্য ঘরের বাইরে গিয়ে কাজ করা কষ্টসাধ্য, তারাও ফ্রিল্যান্সিং শিখে পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভুমিকা রাখতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চাইলে কোন সেক্টরে কাজ করবেন?
এ বিষয়টি নিয়ে নতুনদের মনে প্রচুর প্রশ্ন থাকে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে আয় করতে আগ্রহী। কিন্তু কোন পথে হাটবেন, সেটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এ উত্তরটি আসলে নিজেকেই খুজে বের করতে হবে। তবে যেহেতু ফ্রিল্যান্সিং বিষয়গুলো নিয়ে ধারণা কম, সেজন্য এখানে প্রধান বিষয়গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে বলার চেষ্টা করছি। ধারাবাহিকটির পরের পর্বগুলোতে প্রতিটা বিষয় নিয়ে বিস্তারিত নিয়ে আসব। প্রতিটা পর্ব পড়ার চেষ্টা করুন।
অনলাইনে মূলত সবচাইতে বেশি কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে যে যে সেক্টরগুলোতে সেগুলো হলো:

গ্রাফিক ডিজাইন, এসইও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ওয়েবডিজাইন, ইমেইল মার্কেটিং, অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও অ্যাডিটিং, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি।

গ্রাফিক ডিজাইন: যে কোন কোম্পানীর লোগো, ব্রুশিয়ার থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রিন্টিং জাতীয় সকল প্রোডাক্ট গ্রাফিক ডিজাইনাররা তৈরি করেন। আবার যে কোন ওয়েবডিজাইনের শুরুতে কিংবা ভিডিও অ্যাডিটিংয়ের কাজে কিংবা অ্যানিমিশন প্রজেক্টের ক্ষেত্রেও গ্রাফিক ডিজাইনারদের প্রয়োজন। এমনকি এসইও প্রজেক্টের গ্রাফিক ডিজাইনারদের সাহায্য প্রয়োজন হয়। এটুকু তথ্যই গ্রাফিক ডিজাইনারদের চাহিদা কেমন বুঝার জন্য যথেষ্ট।

এসইও:  বর্তমানে মানুষজন তাদের বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো খুজে বের করার জন্য গুগলে সার্চ দেয়। গুগলের উপর নির্ভরশীলতা মানুষের দৈনন্দিন কাজকে আরও বেশি সহজ করে দিচ্ছে। যদি কোন কোম্পানী তার সার্ভিস কিংবা প্রোডাক্টকে সম্ভাব্য ভোক্তার সার্চের সময় চোখের সামনে নিয়ে আসতে পারে, তাহলে সেই সার্ভিসটি বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আর এ কাজটিকেই বলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, সংক্ষেপে এসইও। বর্তমানে অনলাইনে মানুষের নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারনে সকল কোম্পানী তাদের সার্ভিসকে প্রচারের জন্য অনলাইনকেই সবচাইতে বেশি ব্যবহার করছে। আর সেজন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িকভাবে উন্নতির জন্য এসইও এক্সপার্টদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এসইও এক্সাপার্টদের কাজের ক্ষেত্রগুলো সেজন্য অনেক বেশি।

happy freelancing

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:  কোন প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে তাদের মার্কেটিং করে দিলে এবং সেক্ষেত্রে প্রতিটা প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিসের বিক্রির টাকা হতে একটা অংশ পেলে এ বিষয়টাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলে। আন্তর্জাতিক বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসাকে আরো বেশি বড় করার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সিস্টেম চালু রেখেছে। বাংলাদেশে অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট, ক্লিক ব্যাংক অ্যাফিলিয়েট অনেক বেশি জনপ্রিয়।

ওয়েব ডেভেলপমেন্ট:  আধুনিকযুগে প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া অনলাইনেই তৈরি হচ্ছে নিউজ পোর্টাল, টিভি, কমিউনিটি সাইট, ব্লগসহ আরো বিভিন্ন ধরনের সাইট। এক হিসেব অনুযায়ি সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৫৬২টি করে নতুন ওয়েবসাইট চালু হচ্ছে। এ তথ্যটি ওয়েব ডেভেলপমেন্টের কাজের সম্ভাবনা বুঝতে সহজ করে দিবে আশা করছি।
মার্কেটপ্লেসগুলোতে ওয়েবডিজাইন সম্পর্কিত কাজগুলোর প্রতি ঘন্টার রেট গ্রাফিকস কিংবা এসইও সম্পর্কিত কাজের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

ইমেইল মার্কেটিং: অনলাইনে মার্কেটিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। মার্কেট প্লেসে আয়, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে সফলতার জন্য, কিংবা নিজের বা অন্যের কোন ব্যবসার প্রমোশনের কাজের জন্য এটি শিখতে পারেন। কিংবা গ্রাফিক, ওয়েব ডিজাইনের কাজ যোগাড় করার জন্য ইমেইল মার্কেটিংয়ের জ্ঞানটি অনেক বেশি উপকারে আসবে।

অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট: যারা প্রোগ্রামিংয়ে মোটামুটি ধারণা আছে, তাদের জন্য আমার সবসময়ের পরামর্শ থাকে অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট শিখে নিন। স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে মানে অ্যাপস ডেভেলপারদের চাহিদাও বেড়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সেক্টরটির অনেক চাহিদা থাকবে। মার্কেটপ্লেসগুলোতে এ ধরনের কাজের প্রতিযোগীতা কম থাকে এবং কাজের প্রতি ঘন্টা রেটও অনেক বেশি হয়।

ভিডিও অ্যাডিটিং: যারা ভিডিও তৈরি কিংবা অ্যাডিটিং সম্পর্কিত কাজ জানেন, তারাও অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ার দিকে এখন নজর দিতে পারে। কারণ এসইও, অ্যাডসেন্স ইনকাম কিংবা অ্যাফিলিয়েশনের আয়ের জন্য বর্তমানে ভিডিও অ্যাডিটিংয়ের কাজ জানা থাকলে অনেক ভাল হয়্। আর বর্তমানে একটা অংশ গুগলে কোন কিছু সার্চ না দিয়ে ইউটিউবেই সার্চ বেশি দেয়। ইউটিউবে সার্চ বৃদ্ধি পাচ্ছে মানে ভিডিও অ্যাডিটিংয়ের জ্ঞান এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

আর্টিকেল রাইটিং: ইংরেজি জ্ঞান ভাল থাকলে এবং লেখালেখির অভ্যাস থাকলে শুধুমাত্র আর্টিকেল রাইটার হিসেবেই অনলাইনে অনেক ব্যস্ত ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। মার্কেটপ্লেসগুলো আর্টিকেল রাইটিং, রিরাইটিং সম্পর্কিত কাজগুলো অনেক বেশি থাকে। তাছাড়া এ অভ্যাসকে কাজে লাগিয়ে ব্লগিং করার মাধ্যমেও আয় করা যায়।
উপরে মূলত প্রধান কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম। আরো অনেক কিছু শিখেও অনলাইনে ভাল ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।
এ কাজগুলো জোগাড় করার জন্য বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস রয়েছে। তাছাড়া সোশ্যালমিডিয়াকে ব্যবহার করে, ব্লগিং করে কিংবা ইমেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অনেক বায়ার খুজে বের করা যায়।

পরের পর্বগুলো ধারাবাহিকভাবে আউটসোর্সিংয়ে কাজের জায়গাগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।